polscience.in

MANDALA THEORY কৌটিল্যের মন্ডল নীতি

কৌটিল্যের  মন্ডল নীতি

  KAUTILYA’S MANDALA THEORY কৌটিল্যের মন্ডল নীতি

Table of Contents

ভূমিকা :–

প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস কৌটিল্য (350-275 BCE)এক উল্লেখযোগ্য নাম। রাজা চন্দ্রগুপ্তের মহামন্ত্রী ও রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন কৌটিল্য, যিনি বিষ্ণুগুপ্ত বা চাণক্য নামে পরিচিত । তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল অর্থশাস্ত্র। অনেকে কৌটিল্য কে ইউরোপের ম্যাকিয়াভেলির সাথে তুলনা করে থাকেন। রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে তার যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য নীতিগুলি ছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো মন্ডল তত্ত্ব, সপ্তাঙ্গ নীতি ও দণ্ডনীতি। তবে তার সব চিন্তা ভাবনার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল রাজতন্ত্রের শক্তি কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং রাষ্ট্রকে সুবিন্যস্তভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। আধুনিক বিচারে কৌটিল্য প্রকৃতপক্ষে বাস্তববাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রয়োগিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ছিলেন যিনি ধর্মীয় সংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে রাজতন্ত্রকে ব্যাখ্যা করেছেন।

মন্ডল তত্ত্ব :—

 বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌটিল্যের মন্ডল নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। কৌটিল্য এই তথ্য অনুসারে কোন রাজা তার প্রতিবেশী রাজ্য গুলির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে কোন নীতি কে মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করবে এবং বন্ধু ও শত্রু চিহ্নিত করবে তারই একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে এই মন্ডল তত্ত্ব। তবে কৌটিল্যের মন্ডল নীতি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে বৈরিতা,মিত্রতা এবং নিরপেক্ষ সম্পর্কযুক্ত কতগুলি রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ককে কৌটিল্য ব্যাখ্যা করেছেন ।কৌটিল্যের মন্ডল নীতি কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করেন বিজিগিশু রাজা এবং এই রাজা সম্মুখে এবং পশ্চাদ্ভাগে শত্রু ও মিত্র রাজ্য বা রাজা অবস্থান করে । এই শত্রু-মিত্র রাজ্যের রাজা গুলিকে কৌটিল্য বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল……………

বিজিগীশু রাজা :

কৌটিল্যের মন্ডল কৌটিল্যের মন্ডল নীতি দ্বাদশ রাজ মন্ডল এর কেন্দ্রীয় স্থানে রয়েছেন রাজা। তিনি হলেন সকল ক্ষমতার উৎস এবং যিনি অপরের ওপর আধিপত্য স্থাপন করতে ইচ্ছুক। কৌটিল্য এই রাজাকে বিজিগেশু নামে অভিহিত করেন।

অরি : বিজিগীশু রাজার সীমানা সংলগ্ন অন্য রাজা হলেন বিজিগীশু রাজার স্বাভাবিক শত্রু বা অরি।

মিত্র : অরি রাজ্যের সীমানা বা পরিধি সংলগ্ন যে রাজার অবস্থান তিনি হলেন বিজিগীশু রাজার মিত্র ।

অরিমিত্র : মিত্র রাজার সীমান্তবর্তী রাজা যিনি মিত্র রাজার স্বাভাবিক শত্রু এবং অরির স্বাভাবিক মিত্র তিনি হলেন অরিমিত্র।

মিত্র মিত্র : অরিমিত্র রাজ্যের সীমান্তবর্তী রাজা ও মিত্র রাজ্যের স্বাভাবিক বন্ধু অর্থাৎ মিত্র মিত্র।

অরিমিত্র মিত্র: মিত্র মিত্র রাজার সীমান্তবর্তী রাজা ও আরিমিত্রের স্বাভাবিক বন্ধু ও এবং বিজিগীশু রাজার শত্রু হলো অরিমিত্র মিত্র।

বিজিগীশু রাজার পশ্চাদ্ভাগে আরো চারজন রাজার অবস্থান । যথা 

পঞ্চিগ্রাহ : যে রাজার রাজ্য বিজিগীশু রাজার রাজ্যের পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত সেই রাজাকে পঞ্চিগ্রাহ বলা হয়। তিনি অরির হিতার্থে বিজিগীশু রাজার সঙ্গে শত্রুর সম্পর্ক স্থাপন করেন।

আক্রন্দ : পঞ্চিগ্রাহএর ঠিক পশ্চাদ্বর্তী রাজা যিনি পঞ্চিগ্রাহর স্বাভাবিক শত্রু এবং বিজিগীশু রাজার মিত্র। তিনি হলেন আক্রান্দ।

পঞ্চিগ্রাহসার: আক্রন্দর ঠিক পশ্চাদ্বর্তী রাজা হলেন পঞ্চিগ্রাহসার। যিনি পঞ্চিগ্রাহএর বন্ধু এবং বিজিগীশু রাজার শত্রু।

আক্রন্দসার : পঞ্চিগ্রাহসার রাজার পশ্চাদবর্তি রাজা যে আক্রান্দের সাহায্যের জন্য পঞ্চিগ্রাহসার এর সঙ্গে শত্রুতা করেন, তিনি হলেন আক্রানদের মিত্র আক্রানদসার । এক কথায় বিজিগীশু রাজার সাথে তার মিত্র সম্পর্ক।

 মধ্যম : যে রাজা বিজিগীশু ও অরি উভয় রাজ্যের সন্নিকটে অবস্থিত এবং উভয়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। তাছাড়া এক রাজ্যে দ্বারা আক্রান্ত হলে একা একা প্রতিহত করতে অসমর্থ হন। তিনি মধ্যমে অবস্থান করেন।

উদাসীন : যে রাজা বিজিগীশু, অরি ও মধ্যম রাজা থেকে দূরে অবস্থান করেন এবং তিনি শক্তিশালী এবং একাই যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম, সে রাজা উদাসীন নামে আখ্যায়িত হন। নিচে একটি ছকের সাহায্যে কৌটিল্যের মন্ডল তত্ত্ব টি আলোচনা করা হলো। 

মন্ডল তত্ত্বের গুরুত্ব : বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌটিল্যের মন্ডল নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক। বর্তমান সময়ে যদি আমরা বিজিগীশু রাজা হিসেবে ভারতের অবস্থান লক্ষ্য করি তাহলে সম্মুখ ও পশ্চাৎ ভাগে আমরা বিভিন্ন দেশের অবস্থান মন্ডল তত্ত্ব হিসাবের সাজাতে পারি। যেমন ভারতের প্রধান শত্রু ও অরি হলো পাকিস্তান। এবং মিত্র হলো আফগানিস্থান। অরিমিত্র হলো সিরিয়া বা ইরাক। মিত্র মিত্র হলো ইরান। এবং অরি মিত্র মিত্র হলো তুর্কি। পশ্চাদ্ভাগে পঞ্চিগ্রাহ হলো ভারতের শত্রু ও অরি বন্ধু হল চীন। এবং আক্রন্দ হিসাবে তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম ভারতের বন্ধু। পঞ্চিগ্রাহসার এর ভূমিকা লেখ করা যেতে পারে উত্তর কোরিয়া এবং আক্রান্দসার হলো জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। মাধ্যম হিসেবে নেপাল,ভুটান ও বাংলাদেশের কথা বলা যেতে পারে। অন্যদিকে উদাসীন হিসেবে আমেরিকা ও রাশিয়ার কথা বলা যেতে পারে।

এক কথায় বলা যায় যে প্রাচীনকালে কৌটিল্যের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বর্তমানকালেও সমভাবে প্রাসঙ্গিক।

                                                        ..………………………………………………

Exit mobile version