MANDALA THEORY কৌটিল্যের মন্ডল নীতি

mandala theory
কৌটিল্যের  মন্ডল নীতি

  KAUTILYA’S MANDALA THEORY কৌটিল্যের মন্ডল নীতি

Table of Contents

ভূমিকা :–

প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস কৌটিল্য (350-275 BCE)এক উল্লেখযোগ্য নাম। রাজা চন্দ্রগুপ্তের মহামন্ত্রী ও রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন কৌটিল্য, যিনি বিষ্ণুগুপ্ত বা চাণক্য নামে পরিচিত । তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল অর্থশাস্ত্র। অনেকে কৌটিল্য কে ইউরোপের ম্যাকিয়াভেলির সাথে তুলনা করে থাকেন। রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে তার যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য নীতিগুলি ছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো মন্ডল তত্ত্ব, সপ্তাঙ্গ নীতি ও দণ্ডনীতি। তবে তার সব চিন্তা ভাবনার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল রাজতন্ত্রের শক্তি কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং রাষ্ট্রকে সুবিন্যস্তভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। আধুনিক বিচারে কৌটিল্য প্রকৃতপক্ষে বাস্তববাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ প্রয়োগিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ছিলেন যিনি ধর্মীয় সংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে রাজতন্ত্রকে ব্যাখ্যা করেছেন।

মন্ডল তত্ত্ব :—

 বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌটিল্যের মন্ডল নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। কৌটিল্য এই তথ্য অনুসারে কোন রাজা তার প্রতিবেশী রাজ্য গুলির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে কোন নীতি কে মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করবে এবং বন্ধু ও শত্রু চিহ্নিত করবে তারই একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে এই মন্ডল তত্ত্ব। তবে কৌটিল্যের মন্ডল নীতি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে বৈরিতা,মিত্রতা এবং নিরপেক্ষ সম্পর্কযুক্ত কতগুলি রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ককে কৌটিল্য ব্যাখ্যা করেছেন ।কৌটিল্যের মন্ডল নীতি কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করেন বিজিগিশু রাজা এবং এই রাজা সম্মুখে এবং পশ্চাদ্ভাগে শত্রু ও মিত্র রাজ্য বা রাজা অবস্থান করে । এই শত্রু-মিত্র রাজ্যের রাজা গুলিকে কৌটিল্য বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হল……………

বিজিগীশু রাজা :

কৌটিল্যের মন্ডল কৌটিল্যের মন্ডল নীতি দ্বাদশ রাজ মন্ডল এর কেন্দ্রীয় স্থানে রয়েছেন রাজা। তিনি হলেন সকল ক্ষমতার উৎস এবং যিনি অপরের ওপর আধিপত্য স্থাপন করতে ইচ্ছুক। কৌটিল্য এই রাজাকে বিজিগেশু নামে অভিহিত করেন।

অরি : বিজিগীশু রাজার সীমানা সংলগ্ন অন্য রাজা হলেন বিজিগীশু রাজার স্বাভাবিক শত্রু বা অরি।

মিত্র : অরি রাজ্যের সীমানা বা পরিধি সংলগ্ন যে রাজার অবস্থান তিনি হলেন বিজিগীশু রাজার মিত্র ।

অরিমিত্র : মিত্র রাজার সীমান্তবর্তী রাজা যিনি মিত্র রাজার স্বাভাবিক শত্রু এবং অরির স্বাভাবিক মিত্র তিনি হলেন অরিমিত্র।

মিত্র মিত্র : অরিমিত্র রাজ্যের সীমান্তবর্তী রাজা ও মিত্র রাজ্যের স্বাভাবিক বন্ধু অর্থাৎ মিত্র মিত্র।

অরিমিত্র মিত্র: মিত্র মিত্র রাজার সীমান্তবর্তী রাজা ও আরিমিত্রের স্বাভাবিক বন্ধু ও এবং বিজিগীশু রাজার শত্রু হলো অরিমিত্র মিত্র।

বিজিগীশু রাজার পশ্চাদ্ভাগে আরো চারজন রাজার অবস্থান । যথা 

পঞ্চিগ্রাহ : যে রাজার রাজ্য বিজিগীশু রাজার রাজ্যের পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত সেই রাজাকে পঞ্চিগ্রাহ বলা হয়। তিনি অরির হিতার্থে বিজিগীশু রাজার সঙ্গে শত্রুর সম্পর্ক স্থাপন করেন।

আক্রন্দ : পঞ্চিগ্রাহএর ঠিক পশ্চাদ্বর্তী রাজা যিনি পঞ্চিগ্রাহর স্বাভাবিক শত্রু এবং বিজিগীশু রাজার মিত্র। তিনি হলেন আক্রান্দ।

পঞ্চিগ্রাহসার: আক্রন্দর ঠিক পশ্চাদ্বর্তী রাজা হলেন পঞ্চিগ্রাহসার। যিনি পঞ্চিগ্রাহএর বন্ধু এবং বিজিগীশু রাজার শত্রু।

আক্রন্দসার : পঞ্চিগ্রাহসার রাজার পশ্চাদবর্তি রাজা যে আক্রান্দের সাহায্যের জন্য পঞ্চিগ্রাহসার এর সঙ্গে শত্রুতা করেন, তিনি হলেন আক্রানদের মিত্র আক্রানদসার । এক কথায় বিজিগীশু রাজার সাথে তার মিত্র সম্পর্ক।

 মধ্যম : যে রাজা বিজিগীশু ও অরি উভয় রাজ্যের সন্নিকটে অবস্থিত এবং উভয়ের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। তাছাড়া এক রাজ্যে দ্বারা আক্রান্ত হলে একা একা প্রতিহত করতে অসমর্থ হন। তিনি মধ্যমে অবস্থান করেন।

উদাসীন : যে রাজা বিজিগীশু, অরি ও মধ্যম রাজা থেকে দূরে অবস্থান করেন এবং তিনি শক্তিশালী এবং একাই যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম, সে রাজা উদাসীন নামে আখ্যায়িত হন। নিচে একটি ছকের সাহায্যে কৌটিল্যের মন্ডল তত্ত্ব টি আলোচনা করা হলো। 

কৌটিল্যের মন্ডলতত্ত্ব

মন্ডল তত্ত্বের গুরুত্ব : বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৌটিল্যের মন্ডল নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক। বর্তমান সময়ে যদি আমরা বিজিগীশু রাজা হিসেবে ভারতের অবস্থান লক্ষ্য করি তাহলে সম্মুখ ও পশ্চাৎ ভাগে আমরা বিভিন্ন দেশের অবস্থান মন্ডল তত্ত্ব হিসাবের সাজাতে পারি। যেমন ভারতের প্রধান শত্রু ও অরি হলো পাকিস্তান। এবং মিত্র হলো আফগানিস্থান। অরিমিত্র হলো সিরিয়া বা ইরাক। মিত্র মিত্র হলো ইরান। এবং অরি মিত্র মিত্র হলো তুর্কি। পশ্চাদ্ভাগে পঞ্চিগ্রাহ হলো ভারতের শত্রু ও অরি বন্ধু হল চীন। এবং আক্রন্দ হিসাবে তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম ভারতের বন্ধু। পঞ্চিগ্রাহসার এর ভূমিকা লেখ করা যেতে পারে উত্তর কোরিয়া এবং আক্রান্দসার হলো জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। মাধ্যম হিসেবে নেপাল,ভুটান ও বাংলাদেশের কথা বলা যেতে পারে। অন্যদিকে উদাসীন হিসেবে আমেরিকা ও রাশিয়ার কথা বলা যেতে পারে।

এক কথায় বলা যায় যে প্রাচীনকালে কৌটিল্যের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বর্তমানকালেও সমভাবে প্রাসঙ্গিক।

                                                        ..………………………………………………

Bankim Chandra’s idea of Nationalism

Bankim Chandra's idea of Nationalism

             

Bankim Chandra's idea of Nationalism

 

 

 বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ 

বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ —

বঙ্কিমচন্দ্রের Nationalism চিন্তা ভাবনা ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ  তত্ত্ব ।  মূলত রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাস ও নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি MA  এর বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নটি পরীক্ষায় আসে.।  ফলে জাতীয় বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ বা জাতীয়তাবাদী চিন্তা ভাবনা প্রশ্নটিকে সবিস্তারে আলোচনা করা হলো । মূলত  এই আলোচনার মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্রের রাষ্ট্রচিন্তার মূল বিষয় গুলি কেউ  তুলে ধরা হয়েছে।

ভূমিকা — Nationalism হল একটি ভাবগত ধারণা। বংশ, ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রভৃতি যে কোনো এক বা একাধিক কারণে যখন একটি জনসমাজের মধ্যে গভীর একাত্মবোধ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেই একাত্মবোধ এর কারণে জনসমাজের প্রত্যেককেই সুখ-দুঃখ ন্যায়-অন্যায় মান অপমানের সমান অংশীদার বলে নিজেকে মনে করে তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তা বোধের সৃষ্টি হয় এবং ওই জাতীয়তাবোধের সঙ্গে দেশপ্রেম মিলিত হয়ে একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে গড়ে উঠলে তাকে জাতীয়তাবাদ বলে। এককথায় জাতীয়তাবাদ হল একটি জনসমাজের মধ্যে গড়ে ওঠা একাত্মবোধ।

বঙ্কিমচন্দ্র ও জাতীয়তাবাদ : 

বঙ্কিমচন্দ্রের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল Nationalism এবং এই ভাবনার দ্বারা রাজনৈতিক চিন্তাধারা পরিপুষ্ট হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র কে ভারতের জাতীয়তাবাদের জনক বলা হয়। কারণ বঙ্কিম পূর্ব ভারতের জাতীয়তাবাদী চেতনা ছিল ধোঁয়াটে ও অস্পষ্ট। মূলত বঙ্কিমচন্দ্র ভারতবাসীর মনে সর্বপ্রথম জাতীয়তাবাদী চেতনা কে দার্শনিক প্রেক্ষাপটে পরিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে উপস্থিত করেন। একদিকে আধুনিকতা ও যুক্তিবোধ অপরদিকে উপনিবেশিক সমালোচনা এই দুটোর সাথে ভারতের অতীত ঐতিহ্য ও সনাতন হিন্দু ধর্মের গরিমা এই দুই উপাদান কে মিশিয়ে যে রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রকট করেন তা বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ এর মূল বিষয়।

সাহিত্য ও জাতীয়তাবাদ : 

সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র রাজনৈতিক চিন্তাধারায় Nationalism বা জাতীয়তাবাদী চেতনার পরিচয় পাওয়া যায় তার সাহিত্য ও উপন্যাস এর মধ্যে। আনন্দমঠ, সীতারাম, দেবী চৌধুরানী, মৃণালিনী উপন্যাস এবং কমলাকান্তের দপ্তর, ভারতের স্বাধীনতার পরাধীনতা, ভারত কলঙ্ক, লোকশিক্ষা, বাঙালির বাহুবল প্রভৃতি প্রবন্ধ বঙ্কিমচন্দ্র ভারতের সমাজ বিন্যাস ও জাতি তত্ত্ব সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ গ্রন্থটি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রকৃত রূপরেখা তৈরি করে। এবং বন্দেমাতরম সংগীত দেশের মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় অনুপ্রাণিত করে। তৎকালীন বিপ্লবী আন্দোলন বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ ও বন্দেমাতারাম শব্দের দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন।

ধর্মীয় ব্যঞ্জনা ও বঙ্কিমচন্দ্র :  

বঙ্কিমচন্দ্র বুঝতে পেরেছিলেন যে ভারতবাসীকে জাগানোর সবচেয়ে সহজ ও কার্যকারী মাধ্যম হচ্ছে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি। তাই তিনি জাতীয়তাবাদকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে ভারতবাসীর হৃদয জয় করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি সদর্পে ঘোষণা করেন দেশপ্রেম হল শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং দেশরক্ষা ছাড়া আর কোনো বড় কার্য থাকতে পারে না। তিনি দেবী দুর্গা ও ভারত মাতার কল্পনা করে ভারত মা কে মুক্তি শৃংখল থেকে বের করার কথা বলেন। এই উদ্দেশে তিনি ভবানী মন্দির করার কথা বলেছিলেন। আনন্দমঠ গ্রন্থে ভবানী পাঠক কে একসময় বলতে দেখা যায় যে, সন্তানদের কাছে দেশ ছাড়া আর কোন জননী নেই।

জাতি গঠন ও বঙ্কিমচন্দ্র : 

বঙ্কিমচন্দ্র জাতি গঠন ও দেশের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে জাতির ধারণা কে বিশ্লেষণ করেন। তিনি স্বাধীনতারও পরাধীনতার বিষয়টিকে নিজে তাত্ত্বিক পর্যালোচনা মধ্যে না রেখে তাকে সামগ্রিকভাবে আলোচনার কথা বলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সর্বপ্রথম ভারতীয়দেরকে একটি জাতি হিসাবে গড়ে ওঠা নির্দেশ দেন। ভারতের জাতি হিসেবে গড়ে উঠলে ভারতের আশু সমাধান সম্ভব।

ইংরেজ শাসন ও বঙ্কিমচন্দ্র :

 বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ইংরেজ শাসন কে ভারতের জন্য উপকারী বলে মনে করতেন। কারণ প্রাচীন ভারতের মানুষের মধ্যে সচেতনতার ভাব ছিল । ভারতবর্ষের মধ্যে ভাষাগত ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত বিচ্ছিন্নতা এত বেশি ছিল যে তাদের মধ্যে কখনোই একাত্ম বোধ গড়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। ইংরেজ শাসন ভারতবর্ষে শাসনভার গ্রহণ করার ফলে তাদের অবশ্যম্ভাবী নিপিরণ সমগ্র ভারতবাসীকে একটি Nationalism বা জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় ঐক্যবদ্ধ করে এবং একটি জাতি হিসেবে পরিগণিত হয়।

 উপসংহার : 

 বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেশপ্রেম ও Nationalism একটি উজ্জ্বল চিন্তাভাবনা হলেও অনেক ঐতিহাসিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেননি। তাদের মতে বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ ছিল আসলে হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয়তাবাদী চিন্তা ভাবনা ছিল মূলত হিন্দু সংস্কৃতি কেন্দ্রিক বা হিন্দু জাতীয়তাবাদ। তাই ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের হিন্দুদের স্থান ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। যাই হোক না কেন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও একথা স্বীকার করতেই হবে যে স্বদেশী আন্দোলনের আদর্শকে ভারতীয়দের সামনে তুলে ধরেছিলেন এবং সুস্পষ্ট জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনা একটি আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

………………………………………………………………………………………………………………

ভারতীয় সংবিধানের উৎস। Sources of Indian Constitution

ভারতীয় সংবিধানের উৎস:

ভারতের সংবিধান হল সম্পূর্ণরূপে লিখিত সংবিধান। 1947 সালের 29 আগস্ট ড্রাফটিং কমিটির স্থাপন করা হয় ভারতীয় সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে। এবং 1950 সালের 26 শে নভেম্বর ভারতীয় সংবিধান কে গ্রহণ করা হয়। ফলে এই তারিখটি কে সংবিধান দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানের একটি বড় অংশ দেশ-বিদেশের সংবিধান থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতের সংবিধান তৈরি করতে গণপরিষদ কে এগারোটি অধিবেশন ও 2 বছর 11 মাস 18 দিন সময় লেগেছিল। তাছাড়া ভারতীয় সংবিধান প্রণেতা এরা প্রায় 60 টি দেশে ঘুরে সংবিধান তৈরি করেছিলেন। এই সংবিধান তৈরি করতে তৎকালীন 64 লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। ভারতীয় সংবিধানের উৎস গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল ::::::::

  1. ভারত শাসন আইন 1935 : যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, রাজ্যপাল ও তার কার্যাবলী, বিচার বিভাগ, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ধারা, ও প্রশাসনিক বিষয়।
  2. ব্রিটিশ সংবিধান: পার্লামেন্টের শাসন ব্যবস্থা, আইনের অনুশাসন, রাজ্য আইনসভার পদ্ধতি, এক নাগরিকত্ব, ক্যাবিনেট ব্যবস্থা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ।
  3. যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান( USA) : মৌলিক অধিকার, বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতা, বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা (Judicial Review) ইমপিচমেন্ট পদ্ধতি ( রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি )
  4. আইরিশ সংবিধান: নির্দেশমূলক নীতি, রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য, ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি।
  5. কানাডার সংবিধান : যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় শক্তিশালী কেন্দ্রিকতা, অন্যান্য ক্ষমতার অধিকারী কেন্দ্র, কেন্দ্রের দ্বারা রাজ্যপাল নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শদান এলাকা।
  6. অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান : যুগ্ম তালিকা , কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে অবাধ ও স্বাধীন ব্যবসা বাণিজ্য, যৌথ পার্লামেন্ট।
  7. জার্মানির সংবিধান : জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় মৌলিক অধিকারের সীমিতকরণ।
  8. সোভিয়েত সংবিধান: মৌলিক কর্তব্য এবং ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ন্যায় (সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক) শব্দগুলির সংযুক্তিকরণ।
  9. ফ্রান্সের সংবিধান : প্রজাতন্ত্র , স্বাধীনতার , সাম্য ও ভাতৃত্ববোধ শব্দগুলি নেওয়া হয়েছে ভারতের প্রস্তাবনায়।
  10. দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধান : ভারতীয় সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি, রাজ্যসভার নির্বাচন পদ্ধতি।
  11. জাপানের সংবিধান : আইনের স্থাপনা পদ্ধতি।

42 amendment act। 42 তম সংবিধান সংশোধনী। ভারতের সংবিধান।

 42 তম সংবিধান সংশোধনী

1976 সালের 42 তম সংবিধান সংশোধনী আইনে ভারতীয় সংবিধানের ব্যাপক অংশকে পরিবর্তন, সংশোধন ও সংযোজন করা হয়। স্বাধীনতার পর ভারতে সংবিধানকে এত ব্যাপকভাবে আর কখনো সংশোধিত করা হয়নি। অনেকে এই সংশোধনীকে মিনি কনস্টিটিউশন (Mini Constitution)বলেও অভিহিত করেন। মূলত এই সংবিধান সংশোধনী টি স্মরণ সিং কমিটির সুপারিশ অনুসারে সংশোধিত হয়।42 তম সংবিধান সংশোধনী টি 11 ই নভেম্বর 1976 সালে ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয়।এই সংশোধনীটি 18 ডিসেম্বর 1976 সালে রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে ।3rd জানুয়ারি 1977 সালে এই সংশোধনীটি কার্যকর হয়।এই সংশোধনী পাস করার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ।

Amended provisions of the constitution : সিদ্ধান্ত সমূহ

  1. এই সংশোধনীতে ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় তিনটি শব্দ যুক্ত করা হয় যথা 1) সমাজতান্ত্রিক, ২) ধর্মনিরপেক্ষ ৩) সংহতি।
  2. ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক কর্তব্য নামক একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয় Part-iv ,51(A).
  3. ভারতের রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য থাকবেন। 
  4. এই সংশোধনীতে প্রশাসনিক আদালত নামে এক নতুন ধরনের বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। (Part- xiv/A)
  5. 1971 সালের জনগণনা অনুযায়ী 2001 সাল পর্যন্ত লোকসভার সদস্য সংখ্যা স্থির করা হয়।
  6. সংবিধান সংশোধন কে বিচার বিভাগের আওতার বাইরে রাখা হয়।
  7. সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা ও লেখ জারি ক্ষমতাকে সীমিত করা হয়।
  8. লোকসভা ও বিধানসভার কার্যকালকে পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে 6 বৎসর করা হয়।
  9. নির্দেশমূলক নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন আইন তৈরি হলে যদি সেটা মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে না।
  10. Anti National activity বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের অধিকার পার্লামেন্ট কে দেওয়া হয় এবং তা যদি মৌলিক অধিকার খর্ব করলেও তা বৈধ বলে গণ্য হবে।
  11. জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে নিয়মের সংশোধন করা হয়।
  12. রাষ্ট্রপতি শাসন এর সময়সীমা এককালীন 6 মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করা হয়।
  13.       আইন শৃঙ্খলা অবনতি প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের যেকোনো জায়গায় সশস্ত্র সেনা পাঠাতে পারবে।
  14.       এই সংশোধনীতে পাঁচটি বিষয়কে যুগ্ম তালিকাভুক্ত করা হয়। যথা শিক্ষা, বনদপ্তর, ওজন ও পরিমাপ, বন্যপ্রাণী ও পাখি সংরক্ষণ, বিচার বিভাগীয় প্রশাসন।
  15.    পার্লামেন্ট ও রাজ্য আইনসভার বিল পাসের পদ্ধতি বা কোরাম পদ্ধতির পরিবর্তন করা হয়।
  16.    পার্লামেন্টের সদস্য ও বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের অধিকার ও সুযোগ সুবিধা সময় অনুযায়ী পার্লামেন্ট ঠিক করার কথা বলা হয়। 
  17. All- India Judicial service এর গঠন করা হয়।সিভিল সার্ভেন্ট এর শাস্তি দানের প্রক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত করণ করা হয়।
  18. তিনটি নতুন নির্দেশমূলক নীতির সংযোজন ঘটানো হয় যথা—-

  •     ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও দিন দরিদ্রের জন্য বিনা অর্থে আইনগত সাহায্য দান।
  • শিল্প-কারখানার প্রশাসনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ।
  • রাস্ট্র পরিবেশ, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করবে।

Saptanga Niti / কৌটিল্যের  সপ্তাঙ্গ নীতি

 

 সপ্তাঙ্গ নীতি

প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন কৌটিল্য বা চাণক্য। (375-283 BCE)। তিনি ছিলেন রাজা চন্দ্র গুপ্তের মহামন্ত্রী ও রাজনৈতিক পরামর্শদাতা। তার বিখ্যাত গ্রন্থটি হল অর্থশাস্ত্র।

কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রকে একটি আঙ্গিক সংস্থা বলে বর্ণনা করেছেন। কৌটিল্যের রাষ্ট্রপরিচালনার বিদ্যার অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব। চাণক্যের মতে রাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গ রয়েছে এবং এরা একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখলে এগুলি মূল্যহীন। রাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গের বর্ণনা নিম্নে আলোচনা করা হল যা সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব নামে পরিচিত—

কৌটিল্য

স্বামী :

  • স্বামী বলতে বোঝায় প্রধান বা প্রভু। স্বভাবতই স্বামী বলতে রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপ্রধান কে বোঝায়। কৌটিল্যের মতে রাষ্ট্রকাঠামোর প্রধান অঙ্গ হল রাজা বা স্বামী। রাজাকে উচ্চবংশজাত,সুভদ্র, সংস্কৃতিবান হতে হবে। অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্যের মন্তব্য কোন দুর্বল অথচ উচ্চবংশজাত রাজা অবশ্যই শক্তিশালী নিচু বংশ জাত রাজার থেকে শ্রেষ্ঠতর। রাজা, কাম, ক্রোধ, লিপ্সা, মোহ মুক্ত, সুসংগত সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও অর্থ শাস্ত্রের পন্ডিত হয়ে প্রজাদের মঙ্গলার্থে আত্মনিয়োগ করবেন। রাজা হলেন রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শক্তি।

আমত্য :

  • চাণক্যের মতে আমত্য বলতে সুপ্রশিক্ষিত, সুসংগঠিত, সুদক্ষ প্রশাসন কর্মীদের বুঝিয়েছেন। আমত্যগন সকলকেই যোগ্যতা অনুসারে পদ অর্জন করতে হবে এবং প্রশাসনের নিযুক্ত হতে হবে। চাণক্যের মতে আমত্য গণের হাতে কৃষি উন্নয়ন, ভূখণ্ডের উন্নতি, দুঃখ কষ্ট দূর করা, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া ইত্যাদি দায়িত্ব অর্পিত হয়। তিনি আরো বলেন যে রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজার স্বেচ্ছাচারিতার কোন স্থান নেই।

জনপদ :

  • জনপদ বলতে অর্থশাস্ত্রে জনগণ ও ভূখণ্ড কেই বুঝিয়েছেন। জনপদের থাকবে সুন্দর জলবায়ু ও গোচারণভূমি যেখানে কৃষকরা স্বল্প পরিশ্রমে শস্য উৎপাদন করতে পারবে। এছাড়া কৃষক শ্রেণী রাজস্ব ভার ও শাস্তি ভার বহন করবে এবং তারা হবে আনুগত্য প্রিয় এবং উৎপাদনকারী। কৌটিল্য জনপদের আয়তন সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেননি তবে একটি গ্রামে 100 থেকে 500 পরিবার থাকবে এবং প্রতিটি স্থানীয় তে থাকবে অন্তত আটশত গ্রাম।

দুর্গ:

  • কৌটিল্য রাষ্ট্রের অধিবাসীদের নিরাপত্তার কারণে রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ও চারিদিকে দুর্গ নির্মাণের কথা বলেছেন। দুর্গের আরেকটা নাম পুর। দুর্গ বলতে দুর্গ ও পুর দুটোকেই বোঝায়। আবার সংরক্ষিত রাজধানী কে দুর্গ বলে।

কোষ :

  • সঠিক ও বৈধপথে রাজাকে রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে এবং এই ক্ষমতা রাজার হাতেই থাকবে। কোষাগার স্বর্ণ-রৌপ্য ও মূল্যবান অলঙ্কার ভর্তি থাকবে যেগুলি দুর্ভিক্ষের সময় ব্যবহার করা যাবে। কোষাগার পূর্ণ না হলে বৃহৎ সেনাবাহিনী রাখা যাবে না। আবার তিনি বলেন রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে মৌমাছির ন্যায় যেখানে ফুলের ক্ষতি না করে মধু সংগ্রহ করা হয় ঠিক তেমনি রাজস্ব দাতাদের ক্ষতি না করে রাজস্ব আদায় করতে হবে।

দন্ড :

  • দন্ড হল বল প্রয়োগকারী শক্তি বা ক্ষমতা । তবে সেটা সেনাবাহিনীর মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়। সৈন্যবাহিনী হবে পুরুষানুক্রমিক, রাজভক্ত, শক্তিশালী এবং যুদ্ধে পারদর্শী। এছাড়াও রাজার আজ্ঞা দ্বিধাহীনভাবে মান্য করা হলো সেনাবাহিনীর মৌলিক কর্তব্য। তবে শূদ্র বলপ্রয়োগ কারী শক্তি হবে তা কৌটিল্য মেনে নিতে পারেননি।

মিত্র :

  • রাষ্ট্রের শেষ উপাদান হলো মিত্র। মিত্রতা হবে বংশানুক্রমিক, অকৃত্রিম, উৎসাহদাতা ও আন্তরিক। তবে কৌটিল্য মিত্র বলতে যেমন অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যক্তিবর্গ কে বুঝিয়েছেন তেমনি পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে সাহায্য কারী রাষ্ট্রকে মিত্র রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

      সমালোচনা : 

    1. চাণক্যের রাষ্ট্রপরিচালনার সপ্তাঙ্গ নীতিতে সমস্ত অঙ্গগুলোকে সমান গুরুত্ব দেননি।
    2. অনেকে চাণক্য কে গণতন্ত্রবিরোধী বলেও আখ্যায়িত করেন। কারণ তিনি রাজার হাতেই সমস্ত ক্ষমতা অর্পণ করেন।
    3. কৌটিল্য রাজাকে অপ্রতিরোধ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে স্বেচ্ছাচারিতার পথ প্রতিষ্ঠা করেন।
    4. দ্বিধাহীন আনুগত্য ছিল চাণক্যের সপ্তাঙ্গ নীতির মূল কথা। যা কখনোই সমর্থন যোগ্য নয়।
    5. চাণক্য শূদ্র জাতিকে সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণের উপযুক্ত মনে করতেন না যা তার স্ববিরোধিতা কে সমর্থন করে। তিনি জাতপাত কে যোগ্যতার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন।
    উপসংহার :
    • উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উপসংহারে বলা যায় যে কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব সমালোচনার ঊর্ধ্বে না হলেও তিনি ছিলেন প্রথম রাষ্ট্রচিন্তাবিদ যিনি রাষ্ট্রীয় কাঠামো, সার্বভৌমিকতা ও রাজার ক্ষমতাকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন। এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এক কথায় বলা যায় প্লেটো, অ্যারিস্টোটল, ম্যাকিয়াভেলি রা রাষ্ট্রের সঠিক উপাদান ও প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে পারেননি যা কৌটিল্য সুবিন্যাস্ত ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।