
উদারনীতিবাদের মূল নীতি বা বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বের সবথেকে প্রচলিত এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা হল উদারনীতিবাদ। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণি যে রাজনৈতিক আদর্শকে হাতিয়ার করে সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হয় তাহা হলো উদারনীতিবাদ। জন লক, মিল, গ্রীন, বেন্থাম, লাস্কি , বারকার ইত্যাদি হলেন এই উদারনীতিবাদ এর অন্যতম সমর্থক।
উদারনীতিবাদের মূল নীতি :
রাজনৈতিক ও সামাজিক সাম্য :
- উদারনীতিবাদের মূল নীতি হলো রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। যেমন জীবনের অধিকার, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার, ধর্মের অধিকার , নির্বাচন ও নির্বাচিত করার অধিকার ইত্যাদি ।
শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে সরকার পরিবর্তন :
- উদারনীতিবাদ বৈপ্লবিক উপায় রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের বিরোধী। শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে সংস্কারের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে আস্থাশীল।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা :
- উদারনীতিবাদ রাষ্ট্রের মধ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে নাগরিকদের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ জোর দেয়। তাছাড়া নিরপেক্ষ আদালতের উপস্থিতিও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার :
- উদারনীতিবাদ যেহেতু জনগণের শাসন তাই রাষ্ট্রের মধ্যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে ।
দলীয় ব্যবস্থায় আস্থা :
- উদারনীতিবাদ সরকার গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলে।
ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার :
- উদারনীতিবাদের মূল নীতি হলো নাগরিকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার কে রক্ষা করা। তবে এই অধিকার অবাধ বা অনিয়ন্ত্রিত নয়I
- অন্যান্য বৈশিষ্ট্য : উপরিক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি ছাড়াও নির্দিষ্ট সময় নির্বাচন, স্বার্থ গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তার, সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য হলো উদারনীতিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
উপসংহার : বর্তমানে একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে উদারনীতিবাদ ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। এবং সেইসঙ্গে রাষ্ট্রের কার্যক্ষেত্রের পরিধি সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে এই উদারনীতিবাদ অর্থনৈতিক সাম্যে কে উপেক্ষা কড়ায় মার্কসবাদীরা এর ব্যাপক সমালোচনা করেন। তারা মনে করেন সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য ছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তথাপি বলা যায় উদারনীতিবাদ হলো বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য রাস্ট্র মতবাদ।
