Plato Ideal state

    

Plato Ideal state

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণা আলোচনা কর :

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র ভূমিকা :

প্রাচীন রাষ্ট্রতত্ত্ব আলোচনা প্রসঙ্গে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন Plato । তিনি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর সমগ্র চিন্তাভাবনাকে প্রতিফলিত করেছেন রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক কে তিনি ন্যায় ও আদর্শের প্রেক্ষিতে আলোচনা করেছেন। তিনি যে রাষ্ট্রের ধারণা দেন তা আদর্শ রাষ্ট্র চিন্তাভাবনা নামে পরিচিত তার চিন্তাভাবনাকে The Republic, The Statesman এবং তার আত্মজীবনী seventh letters এ খুব সুন্দর ভাবে আলোচনা করেছেন । নিম্নে প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র চিন্তা ভাবনা আলোচনা করা হলো।

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র ও উদ্ভব :

প্লেটোর মতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মেটানোর তাগিদেই রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। জীবনধারণের জন্য মানুষকে অসংখ্য প্রয়োজন মেটাতে হয় যা এককভাবে সম্ভব হয় না , স্বাভাবিকভাবেই একে অপরের সহযোগিতা উপর নির্ভর করতে হয়। এই ভাবেই পারস্পরিক নির্ভরতা ও আদান-প্রদানের ভিত্তিতেই যৌথ জীবনধারণের ফলে সৃষ্টি হয় রাষ্ট্রের ।

রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মিলন :

আদর্শ রাষ্ট্র আলোচনার ক্ষেত্রে রাস্ট্র ও ব্যক্তির একত্র মিলন ঘটিয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রকে মানবাত্মার ফল বলে মনে করতেন। এছাড়াও তিনি মনে করতেন মানুষের বিভিন্ন উপাদান রাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিফলিত হয় । যথা যুক্তি, তেজ ও উদ্যম এবং কামনা বাসনা। এই গুণের প্রেক্ষিতেই তিনি রাষ্ট্রের উপাদানের শ্রেণীবিভাজন করেন। যথা:–

উৎপাদক শ্রেণী :

মানব জীবনের অসংখ্য চাহিদার মধ্যে তিনটি মৌলিক চাহিদা হল অন্ন ,বস্ত্র ও আশ্রয়। রাষ্ট্র জীবনের আদিপর্বে বিভিন্ন মানুষ এই মৌলিক প্রয়োজনের সঙ্গে জড়িত ও কর্মরত ছিল। এইসব কর্মী মানুষের শ্রেণীগত পরিচয় হলো উৎপাদক শ্রেণী।

যোদ্ধা শ্রেণী :

রাষ্ট্রের কাজ মানুষের মৌলিক প্রবৃত্তির নিবারণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাসস্থান ও অন্যান্য রাষ্ট্রের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। এই কাজে প্লেটো রাষ্ট্রের মধ্যে তেজ বা উদ্যমী ব্যক্তিদের যোদ্ধা হিসেবে কল্পনা করেছেন যাদের মধ্যে সাহস, শক্তি ও যুদ্ধ কৌশলে নৈপুণ্য থাকবে।

শাসকশ্রেণী:

রাষ্ট্র শাসনের ক্ষেত্রে সামরিক দক্ষতা ছাড়াও জ্ঞান বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা বিশেষ প্রয়োজন। আর এই যোদ্ধা শ্রেণী থেকেই যুক্তি গুণের অধিকারী ব্যক্তিদের শাসকশ্রেণী হিসাবে বেছে নিয়েছেন রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে। যারা শারীরিক উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক উৎকর্ষের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করবেন।

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র ও ন্যায় :

প্লেটো মনে করতেন আদর্শ রাষ্ট্রে ন্যায় কে প্রতিষ্ঠা করাই হল রাষ্ট্রের পরম ধর্ম। এবং এই ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে যখন সমাজের তিনটি শ্রেণী যথা উৎপাদনকারী শ্রেণি, যোদ্ধা শ্রেণী এবং শাসকশ্রেণী তাদের কর্তব্য অনুসারে নিজের নিজের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করবেন। 

শিক্ষা :

প্লেটো শাসকশ্রেণীর হাতে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি শাসকশ্রেণী যাতে সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে তার জন্য তিনি শিক্ষা, জ্ঞান ও কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে জীবন চর্চা করার কথা বলেন এবং দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষা ব্যবস্থা উল্লেখ করেন।

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র সাম্যবাদ :

প্লেটোর রাষ্ট্র সংক্রান্ত ধারণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সাম্যবাদ। যৌথ জীবনযাত্রা গ্রহণ এবং পরিবার প্রথা বর্জনের পক্ষপাতী ছিলেন প্লেটো।

সমালোচনা : 

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের চিন্তাভাবনাকে অনেকে অবাস্তব বলে মনে করেন। কারণ যৌথ জীবন ব্যবস্থা এবং পরিবার প্রথা বর্জনকে কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এবং বাস্তবেও তা প্রয়োগযোগ্য নয়।

প্লেটোর রাষ্ট্রতত্ত্ব ব্যক্তির কেবল জ্ঞানের ও গুণের কথা বলেছেন। ব্যক্তির রাষ্ট্র ছাড়াও অনেক স্বতন্ত্র ভূমিকা রয়েছে যা প্লেটো রাষ্ট্রতত্ত্বের উপেক্ষিত।

প্লেটোর রাষ্ট্রতত্ত্ব গণতন্ত্রবিরোধী। তিনি রাষ্ট্রপরিচালনায় রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চেয়ে যুক্তিনির্ভর দার্শনিক কে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।

প্লেটো সমাজের শ্রেণী বিভাজন ও শ্রেণি সংঘর্ষের বীজ বপন করেছেন। ফলে সমাজের ঐক্য ও সংহতি নষ্ট হতে পারে বলে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন।

গুরুত্ব: প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থা অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হলেও এর গুরুত্ব কে কখনোই অস্বীকার করা যায় না। সমকালীন সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে তার চিন্তা-ভাবনা সমাজের ভাঙ্গন ও অস্থিরতাকে প্রশমিত করতে অনেকটাই সফল হয়েছিল। তাছাড়া ব্যক্তির নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সর্বোপরি প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে রাষ্ট্রচিন্তাভাবনা প্রসারিত হয়েছে ।

—————_—————————————————————-

Leave a Comment