মার্কসীয় রাষ্ট্র তত্ত্বটি আলোচনা করো

karl marks state theory

                        

 মার্কসীয় রাষ্ট্র তত্ত্বটি আলোচনা করো

ভূমিকা :

  • রাষ্ট্রের উৎস, প্রকৃতি,রাষ্ট্র ক্ষমতা ও তার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের প্রশ্নে রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে যে বিভিন্ন মতামত এর সন্ধান পাওয়া যায় তাদের সাধারন বক্তব্য অনুযায়ী ব্যক্তি ও সমাজের জন্য রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাল মার্কস ও এঙ্গেলস রাষ্ট্রকে একটি সম্পূর্ণ অভিনব দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করেন এবং প্রচলিত ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করেন। মার্কসের দৃষ্টিতে রাস্ট্র মানুষের কল্যাণ সাধন কারী কোন শুভ প্রতিষ্ঠান নয় । এটি উৎপাদনের উপকরণ এর সাথে যুক্ত মালিকদের দ্বারা গঠিত সম্পত্তি রক্ষা ও সাধারণ মানুষের উপর শোষণ চালাবার একটি অভিনব যন্ত্র মাত্র। নিম্নে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—————-

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে মার্কসীয় ধারনা              

                                                                                                                                    মার্কসীয় রাষ্ট্র তত্ত্বটি আলোচনা করো রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে পর্যালোচনা করতে গিয়ে এঙ্গেলস তার বিখ্যাত গ্রন্থ The origin of family private property and the state নামক গ্রন্থে বলেন, আদি অনন্তকাল থেকে রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব ছিলনা এবং এমন সমাজ ছিল যেগুলি রাষ্ট্র ছাড়া চলতো। এককথায় রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র ক্ষমতার কোনো ধারণা সেই সময় ছিল না। অর্থনৈতিক বিকাশের এক বিশেষ স্তরে যখন অনিবার্যভাবে শ্রেণীবিভাজন এল তখন এই বিভাজনের জন্যই রাস্ট্র প্রয়োজনীয় হয়ে উঠলো। আদিম সাম্যবাদী সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অস্তিত্ব না থাকায় সেই সমাজে শ্রেণি বা শ্রেণি শোষণ বা শ্রেণী সংঘর্ষ ছিল না। কিন্তু পরবর্তী দাস যুগে সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভব, পণ্যসামগ্রীর বিনিময় ও লেনদেন প্রবর্তনের ফলে সমাজ জীবনে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখা যায়। সমাজের দাস প্রভুগণ ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানা লাভ করে এবং সম্পত্তিহীন দাস গণ প্রভুর সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এভাবে সমাজের দুটি পরস্পরবিরোধী শ্রেণীর উদ্ভব হয় এবং দাস মালিক ও ভূমি দাস গণ ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থের অংশীদার হিসেবে শ্রেণীসংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে। এই সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে সম্পত্তিবান শ্রেণি তথা দাস প্রভুগণ তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার বজায় রাখার জন্য এবং সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখার জন্য একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুভব করে। আর এই প্রয়োজনের তাগিদেই সৃষ্টি হয় রাষ্ট্র নামক যন্ত্রের।

রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে মার্কসের ধারণা :   

 রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে মার্কস এঙ্গেলস এর দৃষ্টিভঙ্গি হল রাষ্ট্র হল শ্রেণী শোষণের যন্ত্র এবং বলপ্রয়োগের বিশেষ হাতিয়ার। তাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী সমাজ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং উৎপাদনের উপকরনের প্রধান মালিক শ্রেণী শোষণ বজায় রাখার জন্য এই যন্ত্রটি কে ব্যবহার করে। সময়ের বিবর্তনে র সাথে সাথে এই যন্ত্র ও বিবর্তিত হয়েছে। দাস সমাজে ভূমি দাসদের শোষণ করার জন্য দাস মালিকদের স্বার্থে কাজ করেছে। সামন্ত সমাজে সামন্ত শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার জন্য কৃষক ও ভূমি দাসদের উপর শোষণ চালিয়েছে। বর্তমান সমাজে এ রাষ্ট্রনামক যন্ত্রটি পুঁজিবাদীদের স্বার্থে তথা বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে শ্রমিক, কৃষক তথা সর্বহারা শ্রেণীর ন্যায় সঙ্গত পাওনা বা উদ্বৃত্ত মূল্য কে আত্মসাত করেছে। সুতরাং রাষ্ট্র হল শ্রেণী শোষণের একটি বিশেষ যন্ত্র যা শুধুমাত্র ক্ষমতাবান শ্রেণি ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করে।মার্কসীয় রাষ্ট্র তত্ত্বটি আলোচনা করো.

 মার্কসীয় রাষ্ট্র তত্ত্বটি আলোচনা করো
সমাজতান্ত্রিক সমাজের রাষ্ট্রের প্রকৃতি :
সমালোচনা : 

রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতি বিষয়ক তত্ত্বটি বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দ্বারা নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে । যথা ——–

  1. কাল মার্কস রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও বিবর্তনে অর্থনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছেন।
  2.  রাষ্ট্রের উৎপত্তি ক্ষেত্রে অর্থনীতি ছাড়াও ধর্ম, সমাজ ,বংশ ,যুদ্ধ ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
  3. রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কাল প্রপার বলেন ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় রাষ্ট্র শুধু শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস নয়, শ্রেণি সমঝোতার বটে। মার্কসীয় রাষ্ট্র তত্ত্বটি আলোচনা করো
  4. কাল মার্কস রাষ্ট্রের জনকল্যাণ কারী দিকটিকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেছেন।মার্কসের রাষ্ট্রের অবলুপ্তি সম্পর্কে ধারণা এই মতবাদকে কাল্পনিক মতবাদের পরিণত করেছে।
  • উপসংহার :
  • উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উপসংহারে বলতে পারি যে রাষ্ট্রের উৎপত্তি এবং প্রকৃতি সম্পর্কে মার্কসীয় ব্যাখ্যা সম্পূর্ণভাবে নির্ভুল না হলেও এই মতবাদ যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কারণ এই তত্ত্ব টি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রতিষ্ঠা ও ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত। মার্কসীয় রাষ্ট্র তত্ত্বটি আলোচনা করো

— —————————————————–

Entitlement Theory

 

Entitlement Theory 

Robert Nozick’s Entitlement Theory

রবার্ট নজিকের  entitlement তত্ত্ব

ইউরোপের শিল্প বিপ্লব ও নবজাগরণের প্রেক্ষাপটে উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার্থে এবং সাবেকি সামন্ততান্ত্রিক রাজনীতির অবসানের লক্ষ্যে উদারনীতিবাদী রাষ্ট্র তত্ত্বের উদ্ভব হয়। এক্ষেত্রে সপ্তদশ শতাব্দীর ব্রিটিশ দার্শনিক টমাস হবস তার লেভিয়াথান গ্রন্থে চরম সার্বভৌম কর্তৃত্বের ছত্রছায়ায় ব্যক্তির জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে যে রাষ্ট্র তত্ত্বের উদ্ভব ঘটান তা সাবেকি উদারনীতিবাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

                              পরবর্তীকালে লকের Two treatise of civil government নামক গ্রন্থে রাষ্ট্রের কার্যপ্রক্রিয়া কে সীমিত করে ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির মত স্বাভাবিক অধিকারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এরপর অ্যাডাম স্মিথ, হার্বাট স্পেন্সার প্রমূখ দার্শনিকগণ ব্যক্তির অবাধ স্বাধীনতা কে বিশেষত বাণিজ্য ও সম্পত্তির স্বাধীনতাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রের কার্যপ্রক্রিয়া কে সীমিত করার কথা বলেন। রাজনীতিতে তাদের এই ধারণা সাবেকি উদারনীতিবাদ নামে পরিচিত। 

                          প্রায় 1920 এর দশক পর্যন্ত এই তত্ত্ব অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকতা লাভ করে কিন্তু 1929–1939 এই সময়ে পাশ্চাত্য অর্থনীতিতে যে মহাসংকট বা গ্রেট ডিপ্রেশন দেখা দেয় তার ফলে সাবেক উদারনীতিবাদ এর সংকট অত্যন্ত প্রকট আকার নেয়। এই অবস্থায় 1960 থেকে 70 এর দশকে কল্যাণীবাদী উদারনীতিবাদ এবং কেইন্সের macro-economy তত্ত্বের সমালোচনা মূলক তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে রবার্ট নজিক, ফ্রেডারিক হায়েক, মিল্টন ফ্রিডম্যান, স্যারডন টুলুক প্রমুখ দার্শনিকগণ অবাধ স্বাধীনতা কে গুরুত্ব দিয়ে এবং অতি সংকুচিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার পক্ষে যে প্রয়োগ রাখেন তা নয়া উদারনীতিবাদ নামে পরিচিত।

আমাদের আলোচ্য বিষয় স্বত্বাধিকারী তত্ত্ব Entitlement Theory টি Robert Nozick মূলত রলসের ন্যায় বিচার ধারণার বিরোধিতা উদ্দেশ্যে তিনি উপস্থাপনা করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি তার anarchy state and Utopia নামক গ্রন্থে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমাজ, অর্থনীতি ও ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা প্রভৃতি বিষয়কে নিয়ে আলোচনা করেন। তার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে :

সামাজিক ন্যায়বিচার এর স্বত্বাধিকারী তত্ত্ব

ন্যূনতম রাষ্ট্রের ধারণা।

উল্লেখ্য যে যেভাবে ব্যক্তির উদ্যোগকে সমষ্টিগত কল্যাণ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার এর পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপনা করেন তার বিরোধিতা করেন। Robert Nozick এর মতে ব্যক্তির কাজের ওপর বিশেষত আর্থিক ও বাণিজ্যিক সংক্রান্ত স্বাধীনতার ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ অবাঞ্চিত। এর ফলে ব্যক্তির উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেই জন্যেই তিনি মনে করেন ব্যক্তির আত্মবিকাশ এবং সম্পত্তির ভোগ দখলের স্বাধীনতা উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কাম্য নয়। কারণ তার মধ্যে একটি হলো ক্রিয়েটিভ সেলভ বা সৃজনশীল আত্ম স্বতন্ত্র সম্পূর্ণ সত্তা।

Robert Nozick ব্যক্তি স্বাধীনতাকে ও সাম্যের নীতি কে ভিত্তি করে সামাজিক সম্পর্ক গঠনের লক্ষ্যে তার নিজস্ব উদারনৈতিক মত প্রকাশ করেন। এইজন্য রলসের সক্রিয়বাদী রাষ্ট্রের পরিবর্তে তিনি ন্যূনতম রাষ্ট্রের ধারণা ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কিত লকের বক্তব্য , ব্যাক্তি আত্ম স্বতন্ত্র অধিকার সম্পর্কিত কান্টের বক্তব্য এবং সৃজনশীল ব্যক্তির স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা সম্পরকিত জেসমিনের বক্তব্য দ্বারা প্রভাবিত হন। এছাড়াও মার্কিন স্বাতন্ত্র্য ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী লাইসেনজার স্কুটার, বেঞ্জামিন টাকার প্রভৃতি দ্বারা প্রভাবিত হন।

Robert Nozick তার বন্টনের ন্যায় বিচার সংক্রান্ত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হন যথা

সম্পত্তির স্বেচ্ছাকৃত হাতবদল

সম্মতি

নজিক এর মতে সভ্যতার আদি লগ্ন মানুষ নিজেদের সম্পত্তি রক্ষার জন্য নয় সম্মত অর্থাৎ স্বেচ্ছাকৃত উপায় একাধিক এজেন্সিকে ক্ষমতা প্রদান করে। কালক্রমে কোন একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের প্রভাবশালী কোন এজেন্সি আধিপত্য সম্পন্ন হয়ে ওঠে এবং ব্যক্তির জীবন সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব পায়। এইভাবে ন্যূনতম কাজের জন্য নূন্যতম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। নজিক এর মতে এজেন্সিগুলো যেহেতু স্বেচ্ছায় এবং অহিংস উপায়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাই এই দায়িত্ব প্রদান ছিল অত্যন্ত ন্যায় সঙ্গত এবং পরবর্তীকালে সব ধরনের হাতবদল ও ছিল ন্যায় সঙ্গত। অর্থাৎ নজিক এর মতে সম্পত্তির ভোগ দখল এবং হাতবদল এগুলো পুরোপুরি ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তার মতে রলসের মতো সামাজিক উপযোগিতা এবং ন্যায় বিচারের যুক্তিতে ব্যক্তির জীবন প্রক্রিয়া ও সম্পত্তি ভোগ দখলের স্বাধীনতার ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ কখনোই সমর্থন যোগ্য নয়। এই বিষয়টিকে নজিক বন্টনের ন্যায় বিচার সংক্রান্ত স্বত্বাধিকার বলে অভিহিত করেছেন।

এই স্বত্বাধিকার তত্ত্বের মৌলিক দিক :

এই তত্ত্বে ব্যক্তির সৃজনশীল ওয়াত্ত সম্পন্ন ভূমিকাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। নজিক এর মতে ব্যক্তির ধারণাটি অসামাজিক ধারণা নয়। কারণ ব্যক্তি তার নিজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল এবং তার ভূমিকা ও সৃজনশীল।

এই তত্ত্বে মানুষের সম্মতির ভিত্তিতে এবং মানুষের প্রয়োজনে ন্যায় সঙ্গত উপায় যেমন একাধিক নেয় সম্মত সংস্থার উদ্ভব ঘটেছে বলা হয় পাশাপাশি ব্যক্তির সৃজনশীল ভূমিকার ফলে সৃষ্ট সম্পর্কেও তিনি যুক্তি সংগত বলে মনে করেন।

সাবেকি উদারনীতিবাদের মত রাষ্ট্রের ভূমিকা কে সীমিত করার কথা বলেন। তার মতে রাষ্ট্র হল একটি productive এজেন্সি। ব্যক্তির আত্মবিকাশ এবং সম্পত্তির ভোগ দখলের স্বাধীনতার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু ভূমিকাই পালন করবে। তবে তিনি কিন্তু নৈরাজ্যবাদী দের মত রাষ্ট্রের ধ্বংস সাধনের কথা বলেননি। কারণ নাজিকের মতে এর ফলে কোনো না কোনো কর্তৃত্বের উদ্ভব ঘটবে যা ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করতে পারে।

সম্পত্তির অর্জন এবং ভোগ দখলের ক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তির সিদ্ধান্ত কে চূড়ান্ত বলে অভিহিত করেন। ব্যক্তির শক্তি-সামর্থ্য, প্রতিভা ও নিজের সম্পত্তি কে কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে ব্যক্তি। এ বিষয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপকে অবাঞ্ছিত বলে মনে করেন।

মূল্যায়ন : Robert Nozick এই Entitlement Theory টি মার্কসীয় দৃষ্টিতে আত্মকেন্দ্রিক বলে অভিহিত করা হলেও বিভিন্ন সম্প্রদায় বা দার্শনিক যেমন মেকিনটায়ার, চার্লস টেইলর, মাইকেল স্যান্ডেল প্রমুখ এর একে বিচ্ছিন্ন ব্যাক্তি স্বত্তার সহায়ক সামগ্রিকতার পরিপন্থী বলে সমালোচনা করলেও সম্প্রতি উন্নত দেশগুলিতে স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ ফলে যে ব্যাক্তি রাষ্ট্রবিরোধী হয়ে উঠেছে সে বিষয়টি অবহিত করেন। এটি নজিক এর স্বত্বাধিকারী তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা কে মনে করিয়ে দেয়। আসলে নজিক এর স্বত্বাধিকারী তত্ত্ব কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এটি লকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধারণা কান্টের নৈতিক ও আত্মশক্তির ধারণা এবং জেসমিন এর সৃজনশীল ধারণা সমন্বয় মাত্র।

 

 

Linkage Theory

Linkage Theory

 Linkage Theory

আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সম্পর্কের বিশ্লেষণে একটি উল্লেখযোগ্য তত্ত্ব হলো Linkage theory। এই তত্বের অন্যতম প্রবক্তা হলেন James N. Rosenau তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ linkage politics: Thee scientific study of foreign policy নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।
 Linkage বলতে James N. Rosenau এমন এক ধরনের সংগঠন ও আচরণ কে বুঝিয়েছেন যা এক ব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত হয় এবং অপর ব্যবস্থাতেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে জাতীয় রাষ্ট্রকে Linkage theory এর মূল একক বা বিষয়বস্তু হিসেবে অভিহিত করা হয়। তার মতে কোন দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার কোন ঘটনার সৃষ্টি হলে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাতেও তার প্রভাব দেখা যায়। তার মতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

 Rosenau Linkage Theory তে দুটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন।

  1. প্রারম্ভিক পর্যায়ে বা প্রাথমিক পর্যায়ে
  2. মূল বা পরিসমাপ্তি পর্যায়।

এই প্রাথমিক পর্যায়ে উপকরণ এবং পরিসমাপ্তি পর্যায়ে উপপাদ্ বলে অভিহিত করা হয়। এই উপকরণ বা উপপাদ্ গুলিকে আবার দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা

  1. Polity input or output
  2. Environmental input output

উপকরণ বা উপপাদ কোথায় সংঘটিত হচ্ছে তার ওপর এর চরিত্র নির্ভর করে। যদি কোন ঘটনা জাতীয় রাষ্ট্রে উৎপন্ন হয় এবং বাহ্যিক পরিবেশে প্রভাব বিস্তার করে তাহলে তা পলিটি ইনপুট হিসেবে পরিচিত লাভ করে। আবার যদি কোনো ঘটনা বা যে পরিবেশে উৎপত্তি লাভ করুকনা কেন তা জাতীয় রাষ্ট্রে প্রভাব বিস্তার করে তাহলে তাকে Environmental output বলা হয়। James N. Rosenau তার Linkage theory ব্যাখ্যায় তিনি পরিবেশ বলতে সামগ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে বুঝিয়েছেন এবং একটি জাতীয় রাষ্ট্রকে একক হিসেবে কল্পনা করেছেন। তার মধ্যে কোন ঘটনা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবস্থায় উৎপন্ন হয় সেটি অপর ব্যবস্থায় উপকরণ হিসেবে কাজ করে আবার কোন ঘটনা প্রাথমিকভাবে উপকরণ হিসেবে কাজ করলে অপর ব্যবস্থায় সেটি উপপাদ্ হিসেবে কাজ করে।

James N. Rosenau এই দুই ধরনের উপকরণ ও উপপাদ্ কে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ এই দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যদি কোন input ও output ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় এমন ভাবে প্রভাব সৃষ্টি করে যাতে করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় জাতীয় ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় তবে সেটি direct input and output বলা হয়। অপরদিকে input and output ইচ্ছাকৃত ভাবে সৃষ্টি হয় না অথচ তার এটি বিভিন্ন স্তরের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এটি হলো indirect input and output.

James N. Rosenau Linkage theory কে তিন ভাগে ভাগ করেছেন

  1. Penetrative
  2. Reactive
  3. Emulative

 

Rosenau এর মতে একটি রাষ্ট্র হল যখন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারী হিসেবে কাজ করে এবং কতগুলি মূল্যের কর্তৃত্ব সম্পন্ন বরাদ্দের ক্ষমতা দ্বিতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দিয়ে থাকে তখন তার pentrative Linkage এক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাষ্ট্রটি সেইভাবে নীতি নির্দেশিকা দিয়ে থাকে প্রথম রাষ্ট্রটি তা মেনে নেয় .উদাহরণ হিসেবে বলা যায় একটি দেশের দখলদার বাহিনীর কার্যকলাপ আবার সেই দেশ মেনে নেয় সেটাকে Penetrative Linkage বলে। যখন কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া বা পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোন ব্যবস্থাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় তখন তাকে Reactive Linkageবলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় 1998 সালের 11 ই মে ও 13 ই মে ভারতের পক্ষ থেকে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো পাকিস্তান তার কয়েক দিনের মধ্যেই এরূপ বিস্ফোরণ ঘটায়। আবার ঠান্ডা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একে অপরের কার্যাবলী তে অসন্তুষ্ট হয়ে সৈন অস্ত্রশস্ত্র বৃদ্ধি করতে থাকে।

James N. Rosenau এটি কি প্রকার Linkage হলো Reactive linkage তার একটি রূপ অর্থাৎ যখন কোন একটি রাষ্ট্রের অপর একটি রাষ্ট্রের আউটপুট ব্যবস্থায় পরিণত হয় না কিন্তু রাষ্ট্রটি যদি অপর ব্যবস্থার আউটপুটের স্বরূপ আউটপুট সরবরাহ করে তখন তাকে Emulative linkage বলা হয়। ব্রিটিশ সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনুরূপ ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যবস্থার বিকাশ সম্ভব হয়েছে।

Linkage Theory র সুবিধা 

  1. এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি মূল্য নিরপেক্ষ অভিজ্ঞতাবাদী তত্ত্ব রাষ্ট্রগুলির প্রকৃত আচরণের ধরন কি এবং রাষ্ট্র পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া কি তা পর্যালোচনা করে।
  2. এই তত্ত্ব টি জাতীয় রাষ্ট্রের সীমা কে অস্বীকার করে না আবার আতঙ্কিত করে না তাই জাতীয় রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে পাশাপাশি গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করা হয়।
  3. এই তত্ত্ব টি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্বব্যবস্থা চিত্র তুলে ধরতে সক্ষম তত্ত্বটি জাতীয় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মধ্যে প্রতিটি মিথস্ক্রিয়া কেউ গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করে।
  4. James N. Rosenau পরিবেশিত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ লিংকেজ এর বিষয়টি গুরুত্ব অপরিসীম কারণ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী থেকে পরিবেশের উপর প্রভাব সৃষ্টি কিন্তু পুনর্গঠন করা হয় তা অনেক তথ্য ধরা পড়ে না কিন্তু আলোচনা করা হয়।
  5. অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয়ভাবেই যে ভেরিয়েবল স্কুল কাজ করে তা গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।
Linkage Theory র অসুবিধা

এই তত্ত্ব টি জাতীয়-আন্তর্জাতিক উভয় স্তরের সম্পর্কিত হওয়ার ফলে যে ব্যক্তি জাতীয় রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় যেকোনো একটি ক্ষেত্রে পারদর্শী তার পক্ষে এককভাবে এটাকে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

Linkage theory ছাড়াও ব্যবস্থা জ্ঞাপক সিদ্ধান্ত প্রণয়ন মূলক তত্ত্ব পরিবেশ ও জাতীয় রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। সুতরাং এই তত্ত্বটি কে মৌলিকতা মৌলিক তত্ত্ব বলে দাবি করা যায় না।

বিভিন্ন সমালোচনা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এই তত্ত্বর গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতিতে একদিকে প্রাক্তন সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে কমিউনিস্ট ব্লক অপরদিকে মার্কিন রাষ্ট্রের নেতৃত্বে উদারনৈতিক জোট ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা কালে যে পারস্পরিক অবস্থান গ্রহণ করেছিল তা ব্যাখ্যা করতে অনেক ক্ষেত্রেই সাহায্য করেছে। তবে বলা যায় যে ব্যবস্থা জ্ঞাপক তত্ত্ব ও সিদ্ধান্ত প্রণয়ন তত্ত্ব পরিবেশ কে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলেও একমাত্র বিস্তারিতভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতা ও রাজনীতি এইটাতেই পাওয়া যায়।

Bankim Chandra’s idea of Nationalism

Bankim Chandra's idea of Nationalism

             

Bankim Chandra's idea of Nationalism

 

 

 বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ 

বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ —

বঙ্কিমচন্দ্রের Nationalism চিন্তা ভাবনা ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ  তত্ত্ব ।  মূলত রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাস ও নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি MA  এর বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নটি পরীক্ষায় আসে.।  ফলে জাতীয় বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ বা জাতীয়তাবাদী চিন্তা ভাবনা প্রশ্নটিকে সবিস্তারে আলোচনা করা হলো । মূলত  এই আলোচনার মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্রের রাষ্ট্রচিন্তার মূল বিষয় গুলি কেউ  তুলে ধরা হয়েছে।

ভূমিকা — Nationalism হল একটি ভাবগত ধারণা। বংশ, ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রভৃতি যে কোনো এক বা একাধিক কারণে যখন একটি জনসমাজের মধ্যে গভীর একাত্মবোধ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেই একাত্মবোধ এর কারণে জনসমাজের প্রত্যেককেই সুখ-দুঃখ ন্যায়-অন্যায় মান অপমানের সমান অংশীদার বলে নিজেকে মনে করে তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তা বোধের সৃষ্টি হয় এবং ওই জাতীয়তাবোধের সঙ্গে দেশপ্রেম মিলিত হয়ে একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে গড়ে উঠলে তাকে জাতীয়তাবাদ বলে। এককথায় জাতীয়তাবাদ হল একটি জনসমাজের মধ্যে গড়ে ওঠা একাত্মবোধ।

বঙ্কিমচন্দ্র ও জাতীয়তাবাদ : 

বঙ্কিমচন্দ্রের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল Nationalism এবং এই ভাবনার দ্বারা রাজনৈতিক চিন্তাধারা পরিপুষ্ট হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র কে ভারতের জাতীয়তাবাদের জনক বলা হয়। কারণ বঙ্কিম পূর্ব ভারতের জাতীয়তাবাদী চেতনা ছিল ধোঁয়াটে ও অস্পষ্ট। মূলত বঙ্কিমচন্দ্র ভারতবাসীর মনে সর্বপ্রথম জাতীয়তাবাদী চেতনা কে দার্শনিক প্রেক্ষাপটে পরিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে উপস্থিত করেন। একদিকে আধুনিকতা ও যুক্তিবোধ অপরদিকে উপনিবেশিক সমালোচনা এই দুটোর সাথে ভারতের অতীত ঐতিহ্য ও সনাতন হিন্দু ধর্মের গরিমা এই দুই উপাদান কে মিশিয়ে যে রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রকট করেন তা বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ এর মূল বিষয়।

সাহিত্য ও জাতীয়তাবাদ : 

সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র রাজনৈতিক চিন্তাধারায় Nationalism বা জাতীয়তাবাদী চেতনার পরিচয় পাওয়া যায় তার সাহিত্য ও উপন্যাস এর মধ্যে। আনন্দমঠ, সীতারাম, দেবী চৌধুরানী, মৃণালিনী উপন্যাস এবং কমলাকান্তের দপ্তর, ভারতের স্বাধীনতার পরাধীনতা, ভারত কলঙ্ক, লোকশিক্ষা, বাঙালির বাহুবল প্রভৃতি প্রবন্ধ বঙ্কিমচন্দ্র ভারতের সমাজ বিন্যাস ও জাতি তত্ত্ব সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ গ্রন্থটি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রকৃত রূপরেখা তৈরি করে। এবং বন্দেমাতরম সংগীত দেশের মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় অনুপ্রাণিত করে। তৎকালীন বিপ্লবী আন্দোলন বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ ও বন্দেমাতারাম শব্দের দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন।

ধর্মীয় ব্যঞ্জনা ও বঙ্কিমচন্দ্র :  

বঙ্কিমচন্দ্র বুঝতে পেরেছিলেন যে ভারতবাসীকে জাগানোর সবচেয়ে সহজ ও কার্যকারী মাধ্যম হচ্ছে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি। তাই তিনি জাতীয়তাবাদকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে ভারতবাসীর হৃদয জয় করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি সদর্পে ঘোষণা করেন দেশপ্রেম হল শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং দেশরক্ষা ছাড়া আর কোনো বড় কার্য থাকতে পারে না। তিনি দেবী দুর্গা ও ভারত মাতার কল্পনা করে ভারত মা কে মুক্তি শৃংখল থেকে বের করার কথা বলেন। এই উদ্দেশে তিনি ভবানী মন্দির করার কথা বলেছিলেন। আনন্দমঠ গ্রন্থে ভবানী পাঠক কে একসময় বলতে দেখা যায় যে, সন্তানদের কাছে দেশ ছাড়া আর কোন জননী নেই।

জাতি গঠন ও বঙ্কিমচন্দ্র : 

বঙ্কিমচন্দ্র জাতি গঠন ও দেশের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে জাতির ধারণা কে বিশ্লেষণ করেন। তিনি স্বাধীনতারও পরাধীনতার বিষয়টিকে নিজে তাত্ত্বিক পর্যালোচনা মধ্যে না রেখে তাকে সামগ্রিকভাবে আলোচনার কথা বলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সর্বপ্রথম ভারতীয়দেরকে একটি জাতি হিসাবে গড়ে ওঠা নির্দেশ দেন। ভারতের জাতি হিসেবে গড়ে উঠলে ভারতের আশু সমাধান সম্ভব।

ইংরেজ শাসন ও বঙ্কিমচন্দ্র :

 বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ইংরেজ শাসন কে ভারতের জন্য উপকারী বলে মনে করতেন। কারণ প্রাচীন ভারতের মানুষের মধ্যে সচেতনতার ভাব ছিল । ভারতবর্ষের মধ্যে ভাষাগত ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত বিচ্ছিন্নতা এত বেশি ছিল যে তাদের মধ্যে কখনোই একাত্ম বোধ গড়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। ইংরেজ শাসন ভারতবর্ষে শাসনভার গ্রহণ করার ফলে তাদের অবশ্যম্ভাবী নিপিরণ সমগ্র ভারতবাসীকে একটি Nationalism বা জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় ঐক্যবদ্ধ করে এবং একটি জাতি হিসেবে পরিগণিত হয়।

 উপসংহার : 

 বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেশপ্রেম ও Nationalism একটি উজ্জ্বল চিন্তাভাবনা হলেও অনেক ঐতিহাসিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেননি। তাদের মতে বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ ছিল আসলে হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয়তাবাদী চিন্তা ভাবনা ছিল মূলত হিন্দু সংস্কৃতি কেন্দ্রিক বা হিন্দু জাতীয়তাবাদ। তাই ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের হিন্দুদের স্থান ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। যাই হোক না কেন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও একথা স্বীকার করতেই হবে যে স্বদেশী আন্দোলনের আদর্শকে ভারতীয়দের সামনে তুলে ধরেছিলেন এবং সুস্পষ্ট জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনা একটি আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

………………………………………………………………………………………………………………

ভারতীয় সংবিধানের উৎস। Sources of Indian Constitution

ভারতীয় সংবিধানের উৎস:

ভারতের সংবিধান হল সম্পূর্ণরূপে লিখিত সংবিধান। 1947 সালের 29 আগস্ট ড্রাফটিং কমিটির স্থাপন করা হয় ভারতীয় সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে। এবং 1950 সালের 26 শে নভেম্বর ভারতীয় সংবিধান কে গ্রহণ করা হয়। ফলে এই তারিখটি কে সংবিধান দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানের একটি বড় অংশ দেশ-বিদেশের সংবিধান থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতের সংবিধান তৈরি করতে গণপরিষদ কে এগারোটি অধিবেশন ও 2 বছর 11 মাস 18 দিন সময় লেগেছিল। তাছাড়া ভারতীয় সংবিধান প্রণেতা এরা প্রায় 60 টি দেশে ঘুরে সংবিধান তৈরি করেছিলেন। এই সংবিধান তৈরি করতে তৎকালীন 64 লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। ভারতীয় সংবিধানের উৎস গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল ::::::::

  1. ভারত শাসন আইন 1935 : যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, রাজ্যপাল ও তার কার্যাবলী, বিচার বিভাগ, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ধারা, ও প্রশাসনিক বিষয়।
  2. ব্রিটিশ সংবিধান: পার্লামেন্টের শাসন ব্যবস্থা, আইনের অনুশাসন, রাজ্য আইনসভার পদ্ধতি, এক নাগরিকত্ব, ক্যাবিনেট ব্যবস্থা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ।
  3. যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান( USA) : মৌলিক অধিকার, বিচারবিভাগীয় স্বাধীনতা, বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা (Judicial Review) ইমপিচমেন্ট পদ্ধতি ( রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি )
  4. আইরিশ সংবিধান: নির্দেশমূলক নীতি, রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য, ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি।
  5. কানাডার সংবিধান : যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় শক্তিশালী কেন্দ্রিকতা, অন্যান্য ক্ষমতার অধিকারী কেন্দ্র, কেন্দ্রের দ্বারা রাজ্যপাল নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শদান এলাকা।
  6. অস্ট্রেলিয়ার সংবিধান : যুগ্ম তালিকা , কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে অবাধ ও স্বাধীন ব্যবসা বাণিজ্য, যৌথ পার্লামেন্ট।
  7. জার্মানির সংবিধান : জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় মৌলিক অধিকারের সীমিতকরণ।
  8. সোভিয়েত সংবিধান: মৌলিক কর্তব্য এবং ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ন্যায় (সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক) শব্দগুলির সংযুক্তিকরণ।
  9. ফ্রান্সের সংবিধান : প্রজাতন্ত্র , স্বাধীনতার , সাম্য ও ভাতৃত্ববোধ শব্দগুলি নেওয়া হয়েছে ভারতের প্রস্তাবনায়।
  10. দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধান : ভারতীয় সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি, রাজ্যসভার নির্বাচন পদ্ধতি।
  11. জাপানের সংবিধান : আইনের স্থাপনা পদ্ধতি।

Hegel’s theory of state

Hegel's theory of state

         

Hegel's theory of state

    

Hegel’s theory of state    

 Georg Wilhelm Friedrich Hegel (1770-1831).

  হেগেলের রাষ্ট্রতত্ত্ব

ভূমিকা :

জার্মান দার্শনিক হেগেল মূলত একজন ভাববাদী রাষ্ট্র দার্শনিক। হেগেলের রাষ্ট্র দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু হল রাস্ট্র। তিনি দ্বন্দ্ববাদের সাহায্যে রাষ্ট্রের মহত্ব কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার এই ভাববাদী রাষ্ট্রতত্ত্ব সু সংঘবদ্ধভাবে গ্রন্থিত হয়েছে তার philosophy of rights নামক গ্রন্থে। তিনি মনে করতেন রাষ্ট্র হল মর্তের বুকে ঈশ্বরের পদচারণা। হেগেলের এই রাষ্ট্রতত্ত্ব নিম্নে সবিস্তারে আলোচিত হল:–

Hegel's theory of state

হেগেলের রাষ্ট্রতত্ত্বের মূল বক্তব্য :

  1. রাষ্ট্রের উদ্ভবে দ্বান্দ্বিকতার প্রয়োগ : হেগেলের মতে রাষ্ট্র হল সুদীর্ঘ ক্রমবিবর্তনের ফল এবং তা এক দ্বান্দ্বিকতার পর্যায়ে বিকশিত হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায়ে পরিবার বা বাদ তারপর প্রতিবাদ হিসেবে পুরো সমাজ এবং বাঁধ ও প্রতিবাদ অর্থাৎ পরিবার ও সমাজের সমন্বয়ে সম্বাদ রূপে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। রাষ্ট্র হল সব ব্যক্তির মহা মিলন ক্ষেত্র যেখানে পরিবার ও পুরসমাজের সমস্ত বৈশিষ্ট্য বর্তমান।
  2. ব্যক্তির ইচ্ছার সাথে রাষ্ট্রের ইচ্ছার সমন্বয় : হেগেলের দৃষ্টিতে ব্যক্তির ইচ্ছা রাষ্ট্রের কাছে সমর্পিত হলে ব্যক্তির সর্বোচ্চ আত্মিক ও নৈতিক কল্যাণ সাধিত হয়। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেই ব্যক্তি যথার্থ স্বাধীন হয়ে ওঠে। রাষ্ট্র নিজে কোনো লক্ষ্য পূরণের মাধ্যম নয়। সে নিজেই নিজের পরম লক্ষ্য। তাই রাষ্ট্রের মধ্যে ব্যক্তি তার জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায়।
  3. রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নৈতিকতা : হেগেলের মতে রাষ্ট্র হল সামাজিক নৈতিকতার সর্বোৎকৃষ্ট বহিঃপ্রকাশ এবং রাষ্ট্রের সদস্যদের নৈতিক মান ঠিক করে দেয়। রাষ্ট্র সামাজিক ন্যায় এর বাস্তব প্রতিফলন সেহেতু ব্যক্তির একমাত্র কর্তব্য হল রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা। এই কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই ব্যক্তি তার নৈতিকতা, স্বাধীনতা ও ভাব সত্তার পূর্ণ বিকাশ সাধন করতে পারে।
  4. রাষ্ট্র ও ব্যক্তি :: হেগেলের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রীয় কর্তিত্ব হলো চরম ও চূড়ান্ত। মানুষ রাষ্ট্রের মধ্যেই তার ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ সাধন করতে সক্ষম। রাষ্ট্র যেহেতু ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতা দেয় সেহেতু ব্যক্তি কোন মতেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ করতে পারবে না। এক কথায় তিনি ব্যক্তিসত্তা কে রাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পন করার কথা বলেন।
  5. রাষ্ট্রের জৈব তত্ত্ব : হেগেল রাষ্ট্রকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ব্যক্তি যা কিছু উৎকর্ষতা সেটি রাষ্ট্রের জন্যই কারণ রাস্ট্র নিজেই নিজের লক্ষ্য। জীব দেহের কোন অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করলে খন্ডিত অংশ এর কার্যকারিতা যেমন থাকে না তেমনি একটি রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ব্যক্তি তার গুরুত্ব ও তাৎপর্য হারিয়ে ফেলে।
  6. যুদ্ধ তত্ত্ব : রাষ্ট্র হল সার্বভৌম ,স্বতন্ত্র, স্বাধীন এবং নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে। প্রয়োজনে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার অধিকারী। হেগেল মনে করতেন যে অবিরাম শান্তি রাষ্ট্রগুলিকে বিপথে পরিচালিত করে তাই রাষ্ট্রকে স্বাবলম্বী ও শক্তিশালী করতে যুদ্ধের প্রয়োজন। তার মতে যুদ্ধ জাতীয় ঐক্য কে সুদৃঢ় করে।
সমালোচনা :  
  1. এই মতবাদটিকে CEM Joad বিভ্রান্তিকর ,বিপদজনক ও একটি ভ্রান্ত মতবাদ বলে মনে করেন।
  2. হেগেলের ব্যক্তির অধিকার কে স্বীকার না করে তিনি ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের যুপকাষ্ঠে বলিপ্রদান করেছেন।
  3. রাষ্ট্রের ধারণাই দেবত্ব আরোপ করে তিনি রাষ্ট্রকে নৈতিক সমালোচনার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন।
  4. রাষ্ট্রের অধিবিদ্যাগত ( metaphysical) তত্ত্ব ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদ সৃষ্টিতে সাহায্য করেছিল।
  5. রাষ্ট্র ছাড়া ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর যে পৃথক স্বাধীন সত্ত্বা রয়েছে তা উপলব্ধি করতে তিনি ব্যর্থ হন।
  6. যুদ্ধ কে সমর্থন করে তিনি অতি -জাতীয়তাবাদ কেই সমর্থন করেছেন।
উপসংহার :
  • Hegel’s theory of state নানাভাবে সমালোচিত হলেও তার গুরুত্ব অপরিসীম। সমকালীন জার্মানির পক্ষে একটি চরম কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া প্লেটো, অ্যারিস্টোটল, ম্যাকিয়াভেলির ভাববাদ হেগেলের দ্বারা পূর্ণতা পায়। তাছাড়া গ্রীন,ব্রাডলে, বোসংকেত, হেগেলের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। সর্বোপরি কাল মার্কস তার দ্বন্দ্বতত্ত্ব হেগেল থেকেই গ্রহণ করেছিলেন।
Main works
  1. Philosophy of right (1821).
  2. Philosophy of history (1837).
  3. The encyclopaedia of the philosophy of sciences.(1817).
  4. Science of logic (1812 & 1816).
  5. Philosophy of law (1820).

                                          ……………………………………….

42 amendment act। 42 তম সংবিধান সংশোধনী। ভারতের সংবিধান।

 42 তম সংবিধান সংশোধনী

1976 সালের 42 তম সংবিধান সংশোধনী আইনে ভারতীয় সংবিধানের ব্যাপক অংশকে পরিবর্তন, সংশোধন ও সংযোজন করা হয়। স্বাধীনতার পর ভারতে সংবিধানকে এত ব্যাপকভাবে আর কখনো সংশোধিত করা হয়নি। অনেকে এই সংশোধনীকে মিনি কনস্টিটিউশন (Mini Constitution)বলেও অভিহিত করেন। মূলত এই সংবিধান সংশোধনী টি স্মরণ সিং কমিটির সুপারিশ অনুসারে সংশোধিত হয়।42 তম সংবিধান সংশোধনী টি 11 ই নভেম্বর 1976 সালে ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয়।এই সংশোধনীটি 18 ডিসেম্বর 1976 সালে রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে ।3rd জানুয়ারি 1977 সালে এই সংশোধনীটি কার্যকর হয়।এই সংশোধনী পাস করার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ।

Amended provisions of the constitution : সিদ্ধান্ত সমূহ

  1. এই সংশোধনীতে ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় তিনটি শব্দ যুক্ত করা হয় যথা 1) সমাজতান্ত্রিক, ২) ধর্মনিরপেক্ষ ৩) সংহতি।
  2. ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক কর্তব্য নামক একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয় Part-iv ,51(A).
  3. ভারতের রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য থাকবেন। 
  4. এই সংশোধনীতে প্রশাসনিক আদালত নামে এক নতুন ধরনের বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। (Part- xiv/A)
  5. 1971 সালের জনগণনা অনুযায়ী 2001 সাল পর্যন্ত লোকসভার সদস্য সংখ্যা স্থির করা হয়।
  6. সংবিধান সংশোধন কে বিচার বিভাগের আওতার বাইরে রাখা হয়।
  7. সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা ও লেখ জারি ক্ষমতাকে সীমিত করা হয়।
  8. লোকসভা ও বিধানসভার কার্যকালকে পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে 6 বৎসর করা হয়।
  9. নির্দেশমূলক নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন আইন তৈরি হলে যদি সেটা মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে না।
  10. Anti National activity বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের অধিকার পার্লামেন্ট কে দেওয়া হয় এবং তা যদি মৌলিক অধিকার খর্ব করলেও তা বৈধ বলে গণ্য হবে।
  11. জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে নিয়মের সংশোধন করা হয়।
  12. রাষ্ট্রপতি শাসন এর সময়সীমা এককালীন 6 মাস থেকে বাড়িয়ে এক বছর করা হয়।
  13.       আইন শৃঙ্খলা অবনতি প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকার ভারতের যেকোনো জায়গায় সশস্ত্র সেনা পাঠাতে পারবে।
  14.       এই সংশোধনীতে পাঁচটি বিষয়কে যুগ্ম তালিকাভুক্ত করা হয়। যথা শিক্ষা, বনদপ্তর, ওজন ও পরিমাপ, বন্যপ্রাণী ও পাখি সংরক্ষণ, বিচার বিভাগীয় প্রশাসন।
  15.    পার্লামেন্ট ও রাজ্য আইনসভার বিল পাসের পদ্ধতি বা কোরাম পদ্ধতির পরিবর্তন করা হয়।
  16.    পার্লামেন্টের সদস্য ও বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের অধিকার ও সুযোগ সুবিধা সময় অনুযায়ী পার্লামেন্ট ঠিক করার কথা বলা হয়। 
  17. All- India Judicial service এর গঠন করা হয়।সিভিল সার্ভেন্ট এর শাস্তি দানের প্রক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত করণ করা হয়।
  18. তিনটি নতুন নির্দেশমূলক নীতির সংযোজন ঘটানো হয় যথা—-

  •     ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও দিন দরিদ্রের জন্য বিনা অর্থে আইনগত সাহায্য দান।
  • শিল্প-কারখানার প্রশাসনে শ্রমিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ।
  • রাস্ট্র পরিবেশ, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করবে।

Saptanga Niti / কৌটিল্যের  সপ্তাঙ্গ নীতি

 

 সপ্তাঙ্গ নীতি

প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন কৌটিল্য বা চাণক্য। (375-283 BCE)। তিনি ছিলেন রাজা চন্দ্র গুপ্তের মহামন্ত্রী ও রাজনৈতিক পরামর্শদাতা। তার বিখ্যাত গ্রন্থটি হল অর্থশাস্ত্র।

কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে রাষ্ট্রকে একটি আঙ্গিক সংস্থা বলে বর্ণনা করেছেন। কৌটিল্যের রাষ্ট্রপরিচালনার বিদ্যার অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব। চাণক্যের মতে রাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গ রয়েছে এবং এরা একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখলে এগুলি মূল্যহীন। রাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গের বর্ণনা নিম্নে আলোচনা করা হল যা সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব নামে পরিচিত—

কৌটিল্য

স্বামী :

  • স্বামী বলতে বোঝায় প্রধান বা প্রভু। স্বভাবতই স্বামী বলতে রাজতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপ্রধান কে বোঝায়। কৌটিল্যের মতে রাষ্ট্রকাঠামোর প্রধান অঙ্গ হল রাজা বা স্বামী। রাজাকে উচ্চবংশজাত,সুভদ্র, সংস্কৃতিবান হতে হবে। অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্যের মন্তব্য কোন দুর্বল অথচ উচ্চবংশজাত রাজা অবশ্যই শক্তিশালী নিচু বংশ জাত রাজার থেকে শ্রেষ্ঠতর। রাজা, কাম, ক্রোধ, লিপ্সা, মোহ মুক্ত, সুসংগত সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও অর্থ শাস্ত্রের পন্ডিত হয়ে প্রজাদের মঙ্গলার্থে আত্মনিয়োগ করবেন। রাজা হলেন রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শক্তি।

আমত্য :

  • চাণক্যের মতে আমত্য বলতে সুপ্রশিক্ষিত, সুসংগঠিত, সুদক্ষ প্রশাসন কর্মীদের বুঝিয়েছেন। আমত্যগন সকলকেই যোগ্যতা অনুসারে পদ অর্জন করতে হবে এবং প্রশাসনের নিযুক্ত হতে হবে। চাণক্যের মতে আমত্য গণের হাতে কৃষি উন্নয়ন, ভূখণ্ডের উন্নতি, দুঃখ কষ্ট দূর করা, অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া ইত্যাদি দায়িত্ব অর্পিত হয়। তিনি আরো বলেন যে রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজার স্বেচ্ছাচারিতার কোন স্থান নেই।

জনপদ :

  • জনপদ বলতে অর্থশাস্ত্রে জনগণ ও ভূখণ্ড কেই বুঝিয়েছেন। জনপদের থাকবে সুন্দর জলবায়ু ও গোচারণভূমি যেখানে কৃষকরা স্বল্প পরিশ্রমে শস্য উৎপাদন করতে পারবে। এছাড়া কৃষক শ্রেণী রাজস্ব ভার ও শাস্তি ভার বহন করবে এবং তারা হবে আনুগত্য প্রিয় এবং উৎপাদনকারী। কৌটিল্য জনপদের আয়তন সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেননি তবে একটি গ্রামে 100 থেকে 500 পরিবার থাকবে এবং প্রতিটি স্থানীয় তে থাকবে অন্তত আটশত গ্রাম।

দুর্গ:

  • কৌটিল্য রাষ্ট্রের অধিবাসীদের নিরাপত্তার কারণে রাজ্যের কেন্দ্রস্থল ও চারিদিকে দুর্গ নির্মাণের কথা বলেছেন। দুর্গের আরেকটা নাম পুর। দুর্গ বলতে দুর্গ ও পুর দুটোকেই বোঝায়। আবার সংরক্ষিত রাজধানী কে দুর্গ বলে।

কোষ :

  • সঠিক ও বৈধপথে রাজাকে রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে এবং এই ক্ষমতা রাজার হাতেই থাকবে। কোষাগার স্বর্ণ-রৌপ্য ও মূল্যবান অলঙ্কার ভর্তি থাকবে যেগুলি দুর্ভিক্ষের সময় ব্যবহার করা যাবে। কোষাগার পূর্ণ না হলে বৃহৎ সেনাবাহিনী রাখা যাবে না। আবার তিনি বলেন রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে মৌমাছির ন্যায় যেখানে ফুলের ক্ষতি না করে মধু সংগ্রহ করা হয় ঠিক তেমনি রাজস্ব দাতাদের ক্ষতি না করে রাজস্ব আদায় করতে হবে।

দন্ড :

  • দন্ড হল বল প্রয়োগকারী শক্তি বা ক্ষমতা । তবে সেটা সেনাবাহিনীর মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়। সৈন্যবাহিনী হবে পুরুষানুক্রমিক, রাজভক্ত, শক্তিশালী এবং যুদ্ধে পারদর্শী। এছাড়াও রাজার আজ্ঞা দ্বিধাহীনভাবে মান্য করা হলো সেনাবাহিনীর মৌলিক কর্তব্য। তবে শূদ্র বলপ্রয়োগ কারী শক্তি হবে তা কৌটিল্য মেনে নিতে পারেননি।

মিত্র :

  • রাষ্ট্রের শেষ উপাদান হলো মিত্র। মিত্রতা হবে বংশানুক্রমিক, অকৃত্রিম, উৎসাহদাতা ও আন্তরিক। তবে কৌটিল্য মিত্র বলতে যেমন অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যক্তিবর্গ কে বুঝিয়েছেন তেমনি পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে সাহায্য কারী রাষ্ট্রকে মিত্র রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

      সমালোচনা : 

    1. চাণক্যের রাষ্ট্রপরিচালনার সপ্তাঙ্গ নীতিতে সমস্ত অঙ্গগুলোকে সমান গুরুত্ব দেননি।
    2. অনেকে চাণক্য কে গণতন্ত্রবিরোধী বলেও আখ্যায়িত করেন। কারণ তিনি রাজার হাতেই সমস্ত ক্ষমতা অর্পণ করেন।
    3. কৌটিল্য রাজাকে অপ্রতিরোধ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে স্বেচ্ছাচারিতার পথ প্রতিষ্ঠা করেন।
    4. দ্বিধাহীন আনুগত্য ছিল চাণক্যের সপ্তাঙ্গ নীতির মূল কথা। যা কখনোই সমর্থন যোগ্য নয়।
    5. চাণক্য শূদ্র জাতিকে সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণের উপযুক্ত মনে করতেন না যা তার স্ববিরোধিতা কে সমর্থন করে। তিনি জাতপাত কে যোগ্যতার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন।
    উপসংহার :
    • উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উপসংহারে বলা যায় যে কৌটিল্যের সপ্তাঙ্গ তত্ত্ব সমালোচনার ঊর্ধ্বে না হলেও তিনি ছিলেন প্রথম রাষ্ট্রচিন্তাবিদ যিনি রাষ্ট্রীয় কাঠামো, সার্বভৌমিকতা ও রাজার ক্ষমতাকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন। এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এক কথায় বলা যায় প্লেটো, অ্যারিস্টোটল, ম্যাকিয়াভেলি রা রাষ্ট্রের সঠিক উপাদান ও প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে পারেননি যা কৌটিল্য সুবিন্যাস্ত ভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

     

     

    Post liberalism। উত্তর উদারনীতিবাদ

    Post liberalism  উত্তর উদারনৈতিক রাষ্ট্রতত্ত্ব
    Post liberalism।  উত্তর উদারনীতিবাদ

     

     উত্তর উদারনীতিবাদ

    পটভূমি: –

    রাজনৈতিক তত্ত্ব বা মতাদর্শ হিসেবে উদারনীতিবাদ হলো একটি অন্যতম প্রচলিত মতবাদ। তবে সময় ,পরিস্থিতি ও ঘটনার প্রেক্ষিতে এই ধারণাগত ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। কারণ ইউরোপের নবজাগরণ ,পিউরিটান বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব ,ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লব, প্রভৃতি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হবস ,লক ,রুশো, বেন্থাম, জেএস মিল, স্পেন্সার , প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সাবেকি উদারনীতিবাদ কে প্রথম চিত্রায়িত করেছিলেন। তবে 1920 দশকের শেষ থেকে এর প্রভাব কমতে থাকে। পরবর্তীকালে লাস্কী, বারকার, প্রমুখ চিন্তাবিদ প্রসারণশীল ও কল্যাণকর রাষ্ট্রের ধারণা দিয়ে কল্যাণকারী উদারনীতিবাদের উদ্ভব ঘটান, যেখানে রাষ্ট্রে ওয়েলফেয়ার স্টেট এ পরিণত হয়। 

    নয়া উদারনীতিবাদের অসারতা :-

    1960 এর দশকে বাজারকেন্দ্রিক রাষ্ট্র তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে। রাষ্ট্রের পরিধিকে সংক্ষিপ্ত করার চিন্তা ধারা গড়ে তোলেন মিল্টন ফ্রিডম্যান, রবার্ট নজিক যা–নয়া উদারনীতিবাদ নামে পরিচিত।

    আপাতদৃষ্টিতে উদারনীতিবাদ এর মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও কতগুলি বিষয়ে তাদের মধ্যে সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন সার্বজনীনতা, ব্যক্তির উপর গুরুত্বারোপ, ব্যক্তির স্বাধীনতা ইত্যাদি। কিন্তু 21 শতাব্দীর গোড়ার দিকেউদারনীতি বাদের নৈতিক ও বৌধিক দিক থেকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। উত্তরাধুনিকতার পেক্ষাপটে নয়া উদারনীতিবাদ অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়ে। কারণ উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য যেমন ব্যক্তি কেন্দ্রিকতা ,আইনের অনুশাসন,সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসন, বহুসংস্কৃতিবাদ প্রভৃতি বিষয় গুলি উত্তরাধুনিক যুগে সমস্যার সৃষ্টি করছিল। যেমন–উত্তর আধুনিক যুগে ব্যক্তিকেন্দ্রিক আলোচনার পরিবর্তে সমাজ ও সংস্কৃতিকে বেশি পরিমাণ রক্ষা করার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে । উত্তর উদারনীতিবাদ পথকে প্রশস্ত করেছে I

    নয়া উদারনীতিবাদের সংকট :

    অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের ফলে ব্রিটেন ,ফ্রান্স ,জার্মানি কিংবা আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও নিজের সংস্কৃতি রক্ষার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে অংশগ্রহণের সুযোগ জাতি রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে ।ফলে বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু জাতি দাঙ্গা সৃষ্টি হচ্ছে।বলাবাহুল্য এই উদারনীতিবাদের সংকটের মূল কারণ উত্তরাধুনিকতা ধারার বিভিন্ন সমস্যা যেমন ,জাতি রাষ্ট্রের সম্প্রচার,ব্যক্তির পরিবর্তে গোষ্ঠী ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দান, ধর্মীয় মৌলবাদের আবির্ভাব, রাষ্ট্র গঠনে ধর্মের ভূমিকা ইত্যাদি। উত্তরাধুনিক চিন্তাধারার প্রেক্ষাপটে উত্তর উদারনীতিবাদের দুজন তাত্ত্বিক এর নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য যথা রিচার্ড রটি ও ইসাইয়া বার্লিন।

    রিচার্ড রোর্টি তার contingency irony and solidarity গ্রন্থে তিনি উদারনীতিবাদের প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করেন এবং বলেন উদারনৈতিক সমাজের মূল্যবোধকে ভেঙে বিনিময়ের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে, যেখানে বলপ্রয়োগের পরিবর্তে বিবর্তন ,বিপ্লব এর পরিবর্তে সংস্কার ,খোলাখুলি প্রতিযোগিতা ও মুক্তবাজার কে গুরুত্ব দিতে হবে।

    উত্তর উদারনীতিবাদের সূচনা :-

    রিচার্ড রূর্ট্রি উত্তর উদারনৈতিক যে তত্ত্বটি হাজির করেন তার বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নরূপ:

    1. এই চিন্তা ধারায় উদারনৈতিক সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রের পক্ষে কোন একটি মতাদর্শ কে সার্বজনীন বা সর্বকালীন বলে দাবি করা সম্ভব নয়। পরিবর্তে স্থান-কাল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ও মূল্যবোধ ও মতাদর্শ প্রাসঙ্গিকতা কে সমর্থন করতে হবে।
    2. শুধুমাত্র ব্যক্তির অধিকার ও ব্যক্তির স্বাধীনতা কে গুরুত্ব দিয়ে রাজনৈতিক আদর্শ গঠন করা সম্ভব নয় ।এই জন্যই সমাজ-সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধ কে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
    3. ধর্মীয় মৌলবাদ , আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, market socialism এর প্রেক্ষিতে নয়া উদারনীতিবাদী বৈশিষ্ট্যের সাথে সাথে অ উদার নৈতিক মূল্যবোধ ও আদর্শের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে।
    4. সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের পাশাপাশি সংখ্যালঘু জনসমাজের চাহিদা দাবি , মূল্যবোধ , সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের উপস্থিতিকে স্বীকার করতে হবে।
    উপসংহার :

    উপরিউক্ত আলোচনার থেকে বলা যায় উত্তর উদারনীতিবাদ কোন উদারনীতিবাদের নতুন সংস্করণ নয়,এটি একটি বিকল্প চিন্তা ধারা যেখানে ব্যক্তির পছন্দ রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের সম্প্রসারণ এমনকি রাষ্ট্রের কাজের প্রকৃতি ও পরিধি কে সামাজিক চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ইঙ্গিত দিয়েছে। Post liberalism

    …………………………………………..

    John Rawls’s Theory of Justice

    John Rawls's Theory of Justice


    John Rawls’s Theory of Justice

    জন রলস : 1921-2002

    Main works– মূল গ্রন্থ :

    A Theory of Justice
    Justice as fairness
    Political liberalism
    The laws of peoples

    পটভূমি :

    জন রলস তার John Rawls’s Theory of Justice রচনার ক্ষেত্রে লক, রুশো কান্ট দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি 1957 সালে প্রকাশিত The Journal of philosophy তে Justice as fairness নামক শিরোনামে সর্বপ্রথম এই ধারণার প্রকাশ করেন। ধ্রুপদী উদারনীতির সংকট ও কাল মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব ন্যায় ধারণা কে সংকটের সম্মুখীন করে। কারণ উৎপাদনের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা স্থাপিত হলে সঠিক বন্টন সম্ভব নয় অন্যদিকে মার্কসের উদ্বৃত্ত মূল্য মুনাফার স্বার্থেই উৎপাদন পরিচালিত হয় যা মানুষের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করে না। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদ ব্যাপক সংকটের সম্মুখীন হয় রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ব্যাহত করে। এই প্রেক্ষাপটেই জন রলস A Theory of Justice নামক গ্রন্থে তার ন্যায় তত্ত্ব টি কে সার্বিকভাবে তুলে ধরেন।

    John Rawls's Theory of Justice

    রলসের ন্যায় বিচারের মূল বৈশিষ্ট্য :::::::::::::

    মানুষ এক প্রারম্ভিক অবস্থানে ( original position)ছিল। এই অবস্থাকে সামাজিক চুক্তি মতবাদের মতো প্রকৃতির রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করা যায় । তবে এটি কোন ঐতিহাসিক অবস্থা নয় । এটি ছিল একটি অনুমান।

    প্রারম্ভিক অবস্থানে ব্যক্তির জ্ঞান বা বিচারবুদ্ধি তেমন ভাবে গড়ে ওঠেনি । মানুষের জ্ঞান ও বিচার বুদ্ধির অপূর্ণতাকে veil of ignorance বা অজ্ঞতার অবগকুন্ঠন বা ঘোমটা বলে অভিহিত করেছেন।

    প্রারম্ভিক অবস্থানে অজ্ঞতার অবগকুণ্ঠনের ফলে সে তার সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল না। সে এটাও জানত না যে প্রাকৃতিক সম্পদ কিভাবে বন্টিত হচ্ছে এবং তাতে তার অধিকার আছে কিনা ?

    রলসের চুক্তিবদ্ধ মানুষ অজ্ঞ হলেও তাদের কাছে যুক্তি বোধের অভাব ছিল না। এই যুক্তি দ্বারা অজ্ঞতা থেকে ন্যায়-নীতির দিকে অগ্রসর হবে।

    এই যুক্তি বোধের কারনে মানুষ অজ্ঞতা ত্যাগ করে সামাজিক চাহিদা যথা স্বাধীনতা,সুযোগ ,আয়, সম্পদ ও আত্মমর্যাদার সঠিক বিন্যাস ঘটুক, তা দাবী করে।

    রলস চেয়েছিলেন’ ন্যায্য বন্টন নীতি। তবে এ ধারণা গড়ে তোলার জন্য তিনি প্রতিফলন কারী ভারসাম্যের পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। যেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ,ইচ্ছা,যোগ প্রভৃতির ঊর্ধ্বে উঠে নৈতিক বিশ্বাস কতৃক কাঠামোর মধ্যে পারস্পরিক বোঝা পড়ার মাধ্যমে সমন্বয় সাধন করে এবং মানুষকে নৈতিকতার দ্বারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে কথা বলেন। উদাহরণস্বরূপ বলেন জন্মদিনের কেক কাটার সময় কে, কিভাবে, কতটা পাবে তার না জানালে কেক টি কে যথাসম্ভব সমানভাবে কাটার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাবে। জন রলস মনে করেন যদি ব্যক্তিবর্গ তাদের প্রাপ্তি সম্পর্কে অবগত থাকলেও নির্দিষ্টভাবে উল্লেখিত না হলে বন্টনের নীতি ন্যায্য হবে। এটি হলো Justice as fairness বা ন্যায় ধারনার সুষ্ঠ প্রকাশ।

    রলসের ন্যায় বিচারের নীতি: 

                                          প্রাথমিক সামাজিক মূল্যবোধ গুলির মধ্যে যদি বন্টনের বিরোধ সৃষ্টি না হয় সেজন্য রলস দুটি নীতির উল্লেখ করেন । যথা….

    ১) প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতায় সমান অধিকার।( Core principle )
    ২) সকলের জন্য সঠিক বা ন্যায্য সুযোগের নীতি।(Maximin principle)

    প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতায় সমান অধিকার: রলস মনে করেন মৌলিক স্বাধীনতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রত্যেক ব্যক্তি সমাজের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সমান অংশীদারিত্ব পাবে। তবে ন্যায় এর ক্ষেত্রে ব্যক্তির অধিকার কে বুঝতে হবে ব্যক্তির নিজস্বতার দ্বারা এবং স্বাধীনতাকে বুঝতে হবে সকলের কল্যাণের দ্বারা।

    সকলের জন্য সঠিক ও নায্য সুযোগ নীতি : John Rawls’s Theory of Justice এই নীতি কে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করেছেন । যথা ….

    A) সামাজিক, আর্থিক অসাম্যকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে যাতে প্রত্যেকের সুবিধার্থে কাজ করে এবং বিশেষভাবে অনগ্রসর মানুষের সাহায্যে লাগে। তিনি মনে করতেন যে সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের সুবিধার্থে বা কল্যানে যদি অসাম্য থাকে তবে তাকেও মেনে নিতে হবে।

    B) সামাজিক ,আর্থিক অসাম্যের ব্যবস্থাপনা এমন হবে যাতে ন্যায্য সমান সুযোগের অবস্থায় পদ ও কার্যালয় বা অবস্থানের সুযোগ সকলের কাছে উন্মুক্ত থাকে। অর্থাৎ সামাজিক ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বন্টনের ক্ষেত্রে পদ ও বণ্টনের সমান সুযোগ সকলকে দিতে হবে।

    সমালোচনা :

    John Rawls’s Theory of Justice বা ন্যায় নীতি তত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলেও তা নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে রবার্ট নজিক, স্যান্ডেল, ওয়াল জার , অ্যালান ব্লুম ইত্যাদির কাছে।

    রলস এর ন্যায় এর কল্পনা কিভাবে ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

    সামাজিক ন্যায় প্রসঙ্গে সমাজের স্বার্থে বা পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বার্থে বিত্তবান শ্রেণীর তাদের স্বার্থ ত্যাগ করবে বা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে তা একটা কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

    সমতার নীতি বিতর্কে অর্থনীতি সামাজিক ন্যায় বন্টনের অসাম্যকে প্রতিফলিত করে।

    মূল্যায়ন  :

    John Rawls’s Theory of Justice বা ন্যায় তত্ত্ব অনেক সমালোচনা থাকলেও তিনি কখনো সমতার সাথে আপোষ করেননি। তিনি মানুষকে সবসময় আত্ম সর্বস্ব ব্যক্তি হিসেবে না দেখে নৈতিক মানুষ হিসেবে কল্পনা করেছেন। তিনি সমাজের প্রত্যেকটা মানুষকে সমান সুযোগ-সুবিধা পায় তার জন্য পার্থক্য নীতি কে গ্রহণ করেছেন। তবে সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতা ও বিচারের সাথে সমঝোতা করেননি ।