Bankim Chandra’s idea of Nationalism

             

Bankim Chandra's idea of Nationalism

 

 

 বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ 

বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ —

বঙ্কিমচন্দ্রের Nationalism চিন্তা ভাবনা ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ  তত্ত্ব ।  মূলত রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাস ও নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি MA  এর বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নটি পরীক্ষায় আসে.।  ফলে জাতীয় বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ বা জাতীয়তাবাদী চিন্তা ভাবনা প্রশ্নটিকে সবিস্তারে আলোচনা করা হলো । মূলত  এই আলোচনার মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্রের রাষ্ট্রচিন্তার মূল বিষয় গুলি কেউ  তুলে ধরা হয়েছে।

ভূমিকা — Nationalism হল একটি ভাবগত ধারণা। বংশ, ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রভৃতি যে কোনো এক বা একাধিক কারণে যখন একটি জনসমাজের মধ্যে গভীর একাত্মবোধ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেই একাত্মবোধ এর কারণে জনসমাজের প্রত্যেককেই সুখ-দুঃখ ন্যায়-অন্যায় মান অপমানের সমান অংশীদার বলে নিজেকে মনে করে তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তা বোধের সৃষ্টি হয় এবং ওই জাতীয়তাবোধের সঙ্গে দেশপ্রেম মিলিত হয়ে একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে গড়ে উঠলে তাকে জাতীয়তাবাদ বলে। এককথায় জাতীয়তাবাদ হল একটি জনসমাজের মধ্যে গড়ে ওঠা একাত্মবোধ।

বঙ্কিমচন্দ্র ও জাতীয়তাবাদ : 

বঙ্কিমচন্দ্রের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল Nationalism এবং এই ভাবনার দ্বারা রাজনৈতিক চিন্তাধারা পরিপুষ্ট হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র কে ভারতের জাতীয়তাবাদের জনক বলা হয়। কারণ বঙ্কিম পূর্ব ভারতের জাতীয়তাবাদী চেতনা ছিল ধোঁয়াটে ও অস্পষ্ট। মূলত বঙ্কিমচন্দ্র ভারতবাসীর মনে সর্বপ্রথম জাতীয়তাবাদী চেতনা কে দার্শনিক প্রেক্ষাপটে পরিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে উপস্থিত করেন। একদিকে আধুনিকতা ও যুক্তিবোধ অপরদিকে উপনিবেশিক সমালোচনা এই দুটোর সাথে ভারতের অতীত ঐতিহ্য ও সনাতন হিন্দু ধর্মের গরিমা এই দুই উপাদান কে মিশিয়ে যে রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রকট করেন তা বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ এর মূল বিষয়।

সাহিত্য ও জাতীয়তাবাদ : 

সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র রাজনৈতিক চিন্তাধারায় Nationalism বা জাতীয়তাবাদী চেতনার পরিচয় পাওয়া যায় তার সাহিত্য ও উপন্যাস এর মধ্যে। আনন্দমঠ, সীতারাম, দেবী চৌধুরানী, মৃণালিনী উপন্যাস এবং কমলাকান্তের দপ্তর, ভারতের স্বাধীনতার পরাধীনতা, ভারত কলঙ্ক, লোকশিক্ষা, বাঙালির বাহুবল প্রভৃতি প্রবন্ধ বঙ্কিমচন্দ্র ভারতের সমাজ বিন্যাস ও জাতি তত্ত্ব সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেন। বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ গ্রন্থটি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রকৃত রূপরেখা তৈরি করে। এবং বন্দেমাতরম সংগীত দেশের মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় অনুপ্রাণিত করে। তৎকালীন বিপ্লবী আন্দোলন বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ ও বন্দেমাতারাম শব্দের দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন।

ধর্মীয় ব্যঞ্জনা ও বঙ্কিমচন্দ্র :  

বঙ্কিমচন্দ্র বুঝতে পেরেছিলেন যে ভারতবাসীকে জাগানোর সবচেয়ে সহজ ও কার্যকারী মাধ্যম হচ্ছে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি। তাই তিনি জাতীয়তাবাদকে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত করে ভারতবাসীর হৃদয জয় করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি সদর্পে ঘোষণা করেন দেশপ্রেম হল শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং দেশরক্ষা ছাড়া আর কোনো বড় কার্য থাকতে পারে না। তিনি দেবী দুর্গা ও ভারত মাতার কল্পনা করে ভারত মা কে মুক্তি শৃংখল থেকে বের করার কথা বলেন। এই উদ্দেশে তিনি ভবানী মন্দির করার কথা বলেছিলেন। আনন্দমঠ গ্রন্থে ভবানী পাঠক কে একসময় বলতে দেখা যায় যে, সন্তানদের কাছে দেশ ছাড়া আর কোন জননী নেই।

জাতি গঠন ও বঙ্কিমচন্দ্র : 

বঙ্কিমচন্দ্র জাতি গঠন ও দেশের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে জাতির ধারণা কে বিশ্লেষণ করেন। তিনি স্বাধীনতারও পরাধীনতার বিষয়টিকে নিজে তাত্ত্বিক পর্যালোচনা মধ্যে না রেখে তাকে সামগ্রিকভাবে আলোচনার কথা বলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সর্বপ্রথম ভারতীয়দেরকে একটি জাতি হিসাবে গড়ে ওঠা নির্দেশ দেন। ভারতের জাতি হিসেবে গড়ে উঠলে ভারতের আশু সমাধান সম্ভব।

ইংরেজ শাসন ও বঙ্কিমচন্দ্র :

 বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ইংরেজ শাসন কে ভারতের জন্য উপকারী বলে মনে করতেন। কারণ প্রাচীন ভারতের মানুষের মধ্যে সচেতনতার ভাব ছিল । ভারতবর্ষের মধ্যে ভাষাগত ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত বিচ্ছিন্নতা এত বেশি ছিল যে তাদের মধ্যে কখনোই একাত্ম বোধ গড়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। ইংরেজ শাসন ভারতবর্ষে শাসনভার গ্রহণ করার ফলে তাদের অবশ্যম্ভাবী নিপিরণ সমগ্র ভারতবাসীকে একটি Nationalism বা জাতীয়তাবাদী ভাবধারায় ঐক্যবদ্ধ করে এবং একটি জাতি হিসেবে পরিগণিত হয়।

 উপসংহার : 

 বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেশপ্রেম ও Nationalism একটি উজ্জ্বল চিন্তাভাবনা হলেও অনেক ঐতিহাসিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সমালোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেননি। তাদের মতে বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ ছিল আসলে হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয়তাবাদী চিন্তা ভাবনা ছিল মূলত হিন্দু সংস্কৃতি কেন্দ্রিক বা হিন্দু জাতীয়তাবাদ। তাই ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের হিন্দুদের স্থান ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। যাই হোক না কেন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও একথা স্বীকার করতেই হবে যে স্বদেশী আন্দোলনের আদর্শকে ভারতীয়দের সামনে তুলে ধরেছিলেন এবং সুস্পষ্ট জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনা একটি আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

………………………………………………………………………………………………………………

Leave a Comment